না.গঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির ৯ মনোনয়ন প্রত্যাশী

যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

না.গঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির ৯ মনোনয়ন প্রত্যাশী
প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত শিল্প ও বাণিজ্য নগরী নারায়ণগঞ্জে সংসদীয় আসন পাঁচটি। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ জেলায় গত ১৫ বছরে বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা-হামলার কারণে চাপে ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তাঁরা আবার মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। তবে দখলবাজি, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, মনোনয়নের জন্য অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও বিভক্তি এখন বিএনপির বড় সংকট। পাঁচটি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্তত ৩০ জন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনেই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী ৯ জন আরো কয়েকজন আরো বাড়তে পারে বলে আলোচনা উঠছে। তা ছাড়া বিএনপি বর্তমানে মনোনয়ন চূড়ান্ত না করায় হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজ করছে দলটিতে। তা ছাড়া নিজের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে অভ্যন্তরীন কোন্দল ও দ্বন্দ্ব। এদিকে জামায়াতে ইসলামী সব কটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সম্ভাব্য প্রার্থীরা তিনটি আসনে তৎপরতা চালাচ্ছে।এ ছাড়া জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম, খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণসংযোগ চালাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মাঠ যখন গরম, তখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পুরোপুরি আত্মগোপনে।
নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জ ৩, ৪ ও ৫ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। ৩ ও ৫ আসনের সীমানা পরিবর্তন নিয়ে আপত্তি থাকলে ও সীমানা পরিবর্তনে তিনটি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের হিসাব-নিকাশও পাল্টে যাওয়ার পথে রয়েছে। তা ছাড়া ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ বিগত দিনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন হওয়ায় বিগত দিনে কোন বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। কিন্তু পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন এককভাবে ফতুল্লায় সমীবদ্ধ করায় আসনটিতে বাড়ছে মনোনয়ন প্রত্যাশী লাগছে দ্বন্দ্ব। তা ছাড়া একটি আসনেই একটি দলের এতোগুলো মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকায় বর্তমানে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে অনেকেই মনোনয়ন চূড়ান্ত হলো সংঘর্ষ হয়নি সেই আশঙ্কায় ভূগছেন। তা ছাড়া জমিয়তে ইসলামী নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী মুফতি মনির হোসেন কাসেমী বিএনপির মনোনয়ন বা বিএনপির সমর্থন না পেলে নির্বাচন করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। তা ছাড়া অন্যদিকে বিএনপির বাকি ৮ মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল রাজীব, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এড. সরকার হুমায়ূন কবির, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ¦ শাহ-আলম, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. বারী ভূঁইয়া, ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম টিটু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। এরাব বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন। এর বাহিরে ও আরো কয়েকজন নিজেদের প্রস্তুত করছেন তারা ও এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী তালিকায় নাম লিখাতে হচ্ছেন প্রস্তুত।
সূত্র বলছে, জেলার ফতুল্লা-সদর থানা নিয়ে এ আসন গঠিত। এটি বিগত দিনে আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের আসন। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও গা ঢাকা দিয়েছেন। এ আসনে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। এ ছাড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ¦ শাহ-আলম, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলামসহ অন্তত ৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী যা নিয়ে ব্যাপক দ্বন্দ্বের আভাস রয়েছে। তা ছাড়া বর্তমানে মনোনয়নের ক্ষেত্রে কয়েক দফা অভ্যন্তরীণ জরিপ হয়ে গেছে। এখন সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। সব তথ্য সংগ্রহ শেষে সেগুলো স্থায়ী কমিটিতে উত্থাপন করা হবে। এই কমিটিই সংসদীয় বোর্ড হিসেবে কাজ করে এবং মনোনয়নের চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। এরপর দল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে এবং ভোটের মাঠে শক্ত উপস্থিতি ও নির্বাচনী গতি তৈরির লক্ষ্যে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু হবে বলে জানিয়েছে সূত্র। তা ছাড়া জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং প্রচারণা শুরু করেছে। বিএনপি নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বিএনপি যদি শুধু আন্দোলন ও রাজনৈতিক অচলাবস্থায় ব্যস্ত থাকে, তাহলে জামায়াত আগে প্রচারণা শুরু করে মাঠে বাড়তি সুবিধা পেতে পারে। তা ছাড়া ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসন জুড়ে প্রতিটি আসনেই বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। যার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সর্বোচ্চ প্রার্থী বিদ্ধমান। যাকে ঘিরে বিএনপিতে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক দ্বন্দ্ব তা ছাড়া বর্তমানে সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর বিএনপি থেকে তৈরি হয়েছে নামে-বেনামে নানান মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় হাস্যরস অন্যদিকে বিগত দিনে বিএনপির কোন কাজে অংশ না নিয়ে বর্তমানে ঢাল-ঢোল পিঠিয়ে বিএনপিতে সাদরে যোগদান করা নিয়ে ও তৈরি হয়েছে সমীকরণ। সব মিলিয়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়ায় বর্তমানে বিএনপিতে হ-য-ব-র-ল অবস্থা বিরাজমান রয়েছে। তা ছাড়া বর্তমানে বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা নিজেদের সবুজ সংকেত নামে ভূয়া পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে তৈরি করছেন নানা বিভ্রান্তি। যা নিয়ে গত (২৩ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি থেকে এখন পর্যন্ত কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। উপযুক্ত সময়েই দলের নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই যাচাই-বাছাই করে যোগ্য ও সর্বোপরি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় প্রার্থীকেই বেছে নিয়ে তাদের নাম প্রকাশ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনও নির্বাচনি এলাকায় কোনও প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল বা সবুজ সংকেত দেওয়া হয়নি। প্রত্যাশীদের মধ্যে দলীয় নানা কার্যক্রমে যার পারফরম্যান্স ভালো তাকেই প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করা হবে। বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয় তার নিজস্ব গঠনতান্ত্রিক উপায়ে। কোনও সবুজ সংকেতের মাধ্যমে নয়।‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিংবা যেকোনও নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়নের দায়িত্ব পার্লামেন্টারি বোর্ড পালন করে এবং এ ব্যাপারে বোর্ডের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। বর্তমানে সেই দিকে বিবেচনা করেই মনোনয়নে নজর দিয়েছে বিএনপি নেতকার্মীরা। তা ছাড়া বর্তমানে ইসলামী দল প্রচারণায় ব্যস্ত থাকলেও মনোনয়ন না পেয়ে ও বর্তমানে বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৩ ও ৪ আসন জুড়ে নিয়মিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা জনগণের কাছে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও তার দুই ছেলে তা ছাড়া তিনি তার লোকদের ঘোষণা দিয়েছেন লিফলেটের মাধ্যমে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা অবহৃত রাখতে। এদিকে বর্তমানে বিভিন্ন জরিপে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির সাবেক সাংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন মনোনয়ন পাওয়া যোগ্যতায় বাকি ৮ আশাবাদী প্রত্যাশীদের থেকে এগিয়ে রয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তা ছাড়া বিএনপি যদি এই আসনটি ২০১৮ সালের মতো জোটের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন তা হলে এই আসনে জোট থেকে এগিয়ে রয়েছেন মুফতি মনির হোসেন কাসেমী। এর বাহিরে বাকি প্রতিটি মনোনয়ন প্রত্যাশীই নিজেদের আলোচনা রাখতে দৌড়ঝাঁপ অব্যহৃত রখেছেন।