আওয়ামীলীগের দোসর বিএনপির বড় নেতা দাবী করা রশিদ মেম্বার
জার্সি বদলেও শেষ রক্ষা হলো না

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

আওয়ামীলীগের দোসর বিএনপির বড় নেতা দাবী করা রশিদ মেম্বার
ইটভাটার মাটির ব্যবসা দিয়ে উত্থান তার। এক সময় বক্তাবলীর পূর্ব গোপাল নগরের অধিকাংশ ইটভাটাতে মটির ব্যবসা তার দখলে চলে আসে। এরপর জনপ্রতিনিধি হওয়ার আশা জাগে তার মনে। আওয়ামীলীগ সরকারের সময় এলাকায় মারদাঙ্গা পার্টিও গড়েতুলেছিলেন তিনি। সেই সময় বক্তাবলী ইউপি চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীর সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন রশিদ। শওকতের মনোনীত জাহাঙ্গীর মাষ্টারের সাথে বক্তাবলী ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার পদেও নির্বাচন করেছিলেন তিনি। সেই সময় তিনি জাহাঙ্গীর মাষ্টারে সাথে নির্বাচনে পরজয় বরণ করেছিলেন। এ নিয়ে শওকত চেয়ারম্যানের সাথে রশিদের দ্বন্ধ আরো বেড়ে যায়। এক পর্যায়ে রশিদ মেম্বারের সাথে শওকতের মনোমালিন্যের অবসান ঘটে। ২০২২ সালে রশিদ মেম্বার পুনরায় জাহাঙ্গীর মাষ্টারের সাথে ইউপি নির্বাচনে জয় লাভ করে। এর পরই শুরু হয় রশিদ মেম্বারের মূল কারিশমা। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরই পুনরায় শওকতের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন রশিদ। সুযোগমতো তিনি শামীম ওসমানের বলয়ের সাথে জোর লবিং শুরু করেন। ৫ আগষ্টের পরই রশিদ মেম্বার পুরোদমে বিএনপির নেতা বনে যায়। আর এরপর থেকেই তিনি পুরো এলাকায় তার বাহিনী দিয়ে তান্ডব শুরু করে। পুরো বক্তবলী পরগনায় রশিদ মেম্বার টাকার জোরে শুরু করেন হামলা-ভাংচূড়। গতকাল বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যা মামলায় রশিদকে গ্রেফতার করেছে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। তার গ্রেফতারে এলাকায় স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলেছে এলাকাবাসী।
মুসলিমনগরে নানার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করেছিলেন আব্দুর রশিদ। এরপর মাটির ব্যবসা শুরু করে নিজের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তণ করেন তিনি। ইটভাটায় মাটির ব্যবসা করে টাকার কুমিরে পরিণত হয়ে যান। এরই মধ্যে বক্তাবলীর সরকারী যাত্রী ছাউনি দখল করে নিজের ব্যাক্তিগত অফিসও গড়ে তুলেছিলেন রশিদ। পরবর্তীতে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ঐ অফিস রশিদের দখলমুক্ত হয়। টাকার জোরে তিনি এলাকার তরুনদের দিয়ে বিশাল বাহিনী তৈরী করে। ঐ বাহিনী পূর্ব গোপালনগরসহ ডিক্রিরচর খেয়াঘাট পর্যন্ত এলাকায় নানা ধরনের জোর জুলুম করে বেড়াতো। এক সময় বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শওকত আলীর সাথে দ্বন্ধ ছিলো। শওকত চেয়ারম্যানকে দমিয়ে রাখতে শামীম ওসমান বলয়ের সাথে যোগ দিয়েছিলেন রশিদ মেম্বার । এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। তার মূল টার্গেট ছিলো আওয়ামীলীগার হয়ে বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়া। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ও তাকে শামীম ওসমান ও তার বাহিনীর সাথে দেখেছেন অনেকে। আওয়ামীলীগ সরকারে পতনের পর রশিদ বক্তাবলীর গোপালনগর ও এর আশপাশের এলাকায় নিসজের বাহিনী দিয়ে তান্ডব শুরু করে। লুটপাট করেন বেশ কয়েকটি বাড়িঘর ও রিক্সার গ্যারেজ।
সূত্র আরো জানায়,বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতেও তিনি বেশ কিছৃু বিতর্কিত কর্মকান্ড ঘটিয়েছেন। এতে পুরো বক্তাবলী ইউনিয়নের লোকজন তার উপর ক্ষিপ্ত ছিলো। ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হতে তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। নিজের স্বার্থের ব্যাঘাত হওয়ার নিজের আপন মামা কনকর্ড অয়েল সাপ্লাইয়ার্সের মালিক বাদলের উপরও হামলা করতে পিছপা হননি তিনি।
সূত্র আরো, রশিদ মেম্বারের সাথে শামীম ওসমান ও শওকত আলীর শতাধিক ব্যানার ফেস্টুন পুরো এলাকায় এক সময় শোভা পেতো। আওয়ামীলীগের পদ বাগিয়ে নিতে বেশ টাকাও খরচ করেছিলেন তিনি। কিন্তু আওয়ামীলীগের পতনের পর তিনি বনে যান বিএনপির বড় নেতা। বিগত ১৭ বছর বিএনপির কোনো মিছিল মিটিংয়ে তাকে দেখা না গেলেও এখন তিনিই বক্তাবলী বিএনপির সর্বেসর্বা বলে নিজেকে দাবী করেন। ইউপি মেম্বারদের যে প্যানেল সেই প্যাানেলেও নাম ছিলো না রশিদের। সরকার পতনের পর রশিদ ইউপি মেম্বারদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিজের বগলদাবা করে নতুন প্যানেল গঠন করে,জেলা স্থানীয় সরকার এর কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে পূর্বের প্যানেল বাতিল এবং নতুন প্যানেল গঠনের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন। নিজেকে বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সুপারিশও করেছিলেন তিনি। সেই সময় বিধি বহির্ভূত কাজে সায় দেননি স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মৌরিন করিম। তবে কৌশলে ঠিকই রশিদ বক্তাবলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পদটি বাগিয়ে নেন।
শুধু এলাকায় প্রভাব বিস্তার করাই নয় রশিদ মেম্বারের বিরুদ্ধে কয়েক মাস পূর্ব শ্রমিক দলের অফিস ভাংচূরের অভিযোগও রয়েছে। এব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ফতুল্লা থানা শ্রমিকদলের আঞ্চলিক কমিটি মানববন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান করেছিলেন। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ফতুল্লার দেলপাড়ায় ছাত্র আন্দোলনের ডাকে দিনব্যাপী শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলছিল। এ সময় কর্মসূচিকে প্রতিহত করার লক্ষ্যে আওয়ামীলীগের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে রশিদ মেম্বার ও তার লোকজন উপস্থিত ছিলো। এসময় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারী নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর অতর্কিত হামল,ককটেল বিস্ফোরণ এবং গুলি বর্ষণ করে। এ মামলায় রশিদ মেম্বারকে গতকাল গ্রেফতার করে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ। এদিকে গ্রেফতারের খবর ছড়িয়ে পড়লে আব্দুর রশিদের সমর্থকেরা ফতুল্লা মডেল থানা প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ ও থানা ঘেরাও করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সমর্থকদের ভিড় বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের থানা কম্পাউন্ড থেকে বের করে দেয়।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফুল ইসলাম জানান, আব্দুর রশিদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী চারটি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি জামিন নেননি। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ফতুল্লা থানায় দায়ের করা ইয়াসিন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ওসি আরও বলেন, “আব্দুর রশিদের গ্রেফতারের বিষয়টি অনেকেই না বুঝে থানায় এসে বিক্ষোভ দেখান। পরে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করা হয়। তবে তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়ার পূর্বে তার সমর্থকরা এবং লোক ভাড়া করে এনে থানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তবে ফতুল্লা থানা প্রশাসনের শক্ত অবস্থানের কারণে বিশৃঙ্খলা কারীরা পিছু হঠতে বাধ্য হয়।