Logo
Logo
×

রাজনীতি

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন (সিদ্ধিরগঞ্জ-সোনারগাঁ)

জামায়াতের এক প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির তিন প্রার্থী

Icon

যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

জামায়াতের এক প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির তিন প্রার্থী

জামায়াতের এক প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির তিন প্রার্থী

Swapno

আগামী  ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে দলীয় কর্মসূচির পাশা পাশি পাড়া মহল্লায় আলোচনা সভা করে যাচ্ছে রাজনৈতিক দল গুলোর সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা। তবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সনের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছে অন্তবর্তি কালিন সরকার। তবে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ ডাকসু নির্বাচনের পরে নির্বাচন নিয়ে আওয়াজ কম শুনা যাচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় ভাবে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামীর এক প্রার্থী হিসেবে মাঠে ঘাট থেকে শুরু করে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন ড. ইকবাল হোসেন ভূইয়া। বিপরীতে বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দল থেকে মনোনয়ন চেয়ে মাঠে রয়েছেন। আগামী নির্বাচন কঠিন হবে বলে বার বার মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাওয়ার আহবান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এদিকে অন্তবর্তী কালিন সরকারের প্রধান ড.ইউনুস ২০২৬ সনের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন হতে পারে বলে ঘোষনা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটের সময় নিয়ে এমন অবস্থার মধ্য বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় নিজেদের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে ‘সংস্কারকে’ বেশি গুরুত্ব দেওয়া দল জামায়াতে ইসলামী। সেই হিসেবে ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনের প্রার্থী ঘোষনা করেছে। দলের ঘোষিত প্রার্থীরা পাড়া মহল্লায় গিয়ে মানুষের সাথে মিশে নিজেদের অবস্থান তৈরী করছেন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জামায়াতের প্রার্থীরা মাঠে নেমে মানুষের কাছে দাড়ি পাল্লায় ভোট চেয়ে এখন থেকে প্রচারনায় রয়েছেন।

বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী সোনারগাঁ উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ড. ইকবাল হোসেন ভূইয়া পুরোদমে মাঠে নেমে প্রচারনায় রয়েছেন। এই আসনে তিনি নানা কাজের মাধ্যমে মানুষের মাঝে নিজেকে তুলে দরছেন। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সেবামুলক কাজ করছেন।

দীর্ঘ দিন জামায়াতে ইসমালমীর নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর কার্যালয় বন্ধ করে রেখেছিল পালিয়ে যাওয়া দল আওয়ামী লীগ। এমনকি দলটির নিবন্ধন বাতিল করে তাদের কোন ধরনের কার্যক্রম করতে দেয়া হয় নাই। আর এতে করে দলটি প্রকাশ্যে এসে মানুষের মাঝে তেমন কোন কাজ করতে পারে নাই। কিন্তু গত বছরের ৫ আগষ্টের নারায়ণগঞ্জ জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে এসে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে পাড়া মহল্লার মানুষকে নিজেদের কাছে টানছেন। জুলাই আগষ্টে ছাত্র জনতার আহত নিহত পরিবারের পাশে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে সবার আগে জামায়াতে ইসলামী পাশে দাড়িয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনী রাজনীতিতে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকায় অবতীর্ন হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা জানিয়ে দেয়ার আগেই জেলার ৫ টি আসনে নিজেদের প্রার্থীদের মেলে ধরতে শুরু করেছে দলটি। বিএনপির সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিপরীতে নিজেদের ধীরস্থির রাজনীতি এবং জনগণের কাছে যাওয়ার প্রবনতা তাদের আলাদাভাবে পরিচিত করিয়েছে। যেখানে ৫ আগস্টের পর থেকে বি.এন.পি, এন.সি.পি, হেফাজত অভ্যন্তরীন বিরোধে বিতর্কের জালে জড়িয়েছে, সেখানে নিজেদের ক্লিন ইমেজ ধরে রেখে সকল দলের সাথে ঐক্য জারি রেখেছে জামায়াত। পাশা পাশি মাঠে নেমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রার্থীদের নিজ এলাকায় সংযোগ শুরু করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় ‘জামায়াতের প্রার্থীরা এখন স্ব স্ব আসনের সমস্যা নিয়ে কাজ করছেন। সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন জনগনের কাছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আমলে তুলনামূলক বঞ্চিত বা অবহেলার শিকার হওয়া অঞ্চলের বাসিন্দারা সাদরে গ্রহণ করছেন জামায়াতের প্রার্থীদের।

সুত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ড. ইকবাল হোসেন ভূইয়া প্রচারনায় নেমে ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য যা করনীয় তা তুলে ধরছেন। সেই সাথে তার নির্বাচনী এলাকার  সোনারগাঁ এলাকার পাড়া মহল্ল্য়া গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলছেন। কোন এলাকার কি সমস্যা তা জেনে সমাধানের আশ্বাস দিচ্ছেন।

অপরদিকে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়াকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে নেমেছে। নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের আসন পুনরুদ্ধারে ভোটের মাঠে নেমেছেন বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীরা। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। তিনি এর আগে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি ছিলেন।এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক চার বারের এমপি রেজাউল করিম হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন। তাছাড়া সোনারগাঁ উপজেলা সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানও মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবেক সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন এখানে ভালো অবস্থানে রয়েছে।

দলীয় সুত্রমতে জানা যায়, নারায়নগঞ্জ ৩ আসনটি সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি ওয়ার্ড এবং সোনারগাঁ উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ২০০৮ সনেও একই ভাবে এই আসনটি সিমানা নির্ধারিত ছিল। বিগত ১৬ বছর এ আসনটি আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসাবে পরিচিতি ছিল। তবে দলীয় কোন্দলের কারনে ১৯৮৬ সালের পর থেকে এ আসনটি বারবার আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হয়ে ফলাফল আসে বিএনপির ঘরে।

বিশেষ করে গত ১৯৯১,১৯৯৬ এর ১৫ ফ্রেরুয়ারী প্রহসনমূলক নির্বাচন ও সবশেষ ২০০১ সালের নির্বাচনেও বিএনপির ঘরেইছিল এ আসনটি। তখন এই আসন থেকে বার বার এমপি নির্বাচিত হন রেজাউল করীম। ফলে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির ঘাটি হিসেবে রুপ নেয়। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নতুন মুখ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত মহাজোট প্রার্থীর মাধ্যমে দীর্ঘ ২২ বছর পর আ’লীগ বিজয়ের মুখ দেখেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহন না করায় জাতীয় পার্টির মনোননীত প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৮ সনেও তিনি জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে এমপি হন। সবশেষ ২০২৪ সনে এসে এই্ আসন থেকে এমপি হন আব্দুল্লা আর কায়সার হাসনাত।

তথ্যমতে, দেশে এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কোন রাজনৈতিক দল কত ভোট পাবে, এমন পরিসংখ্যান উঠে এসেছে বেসরকারি এক জরিপে। তাতে দেখা গেছে, বিএনপি সর্বোচ্চ ৪১.৭ শতাংশ ভোট পাবে। যদিও তা এখন আরও তলানীতে নেমেছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা জামায়াতে ইসলামী পাবে ৩১.৬ শতাংশ ভোট। তাদের ভোট ব্যাংক বেড়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। আর ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) পাবে ৫.১ শতাংশ ভোট। উন্নয়ন গবেষণা ও প্রকল্প ব্যবস্থাপনা সংস্থা ইনোভিশন কনসালটিং বাংলাদেশ পরিচালিত জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘জামায়াত তার নিজস্ব রাজনৈতিক বুদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে। কারও সাথে বিরোধ নয়, সবার সাথে ঐক্য এই মন্ত্রকে সামনে নিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যতিত বাকি সবার সাথেই সুসম্পর্ক রেখেছে তারা। নেতাকর্মীদের ঝুট বাণিজ্য, ঘাট দখল, হাট দখল, রাস্তার ইজারা, মাঠের ইজারা নিয়ে আর্থিক সংঘাতে যাবার প্রয়োজন হয়নি বিএনপি বা অন্য দলগুলোর সাথে। এই দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে অন্যান্য দলের প্রার্থীরা। তবে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছে ইকবাল হোসেন ভূইয়া। বিএনপির তিন প্রার্থী মাঠে নেমে মনোনয়ন চেয়ে যাচ্ছেন দলটি।  


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন