শামীম ওসমানের বিদেশে আয়েশ,সেলিম ওসমান বিশৃঙ্খলায় তৎপর

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68c94f4972fa7.jpg)
শামীম ওসমানের বিদেশে আয়েশ,সেলিম ওসমান বিশৃঙ্খলায় তৎপর
২০২৪ সনের ৫ আগষ্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তোপের মুখে পরে দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে শাসন করা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার পতনের সাথে নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি শামীম ওসমান এবং সেলিম ওসমান সহ পুরো ওসমানীয় সম্রাজ্যের পতন ঘটে। অথচ গত বছরের ৫ আগষ্টের আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে ওসমানীয় সম্রাজ্য নারায়ণগঞ্জে একক আধিপত্য করে সর্বত্রে শাসন শোষন, অনাচার,অত্যাচারের মাধ্যমে মানুষকে জিম্মি রেখে নিজেদের মাতাব্বুরি প্রতিষ্ঠা করে সকল ধরনের অপকর্ম করেছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে মানুষের উপর গুলি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান সেলিম ওসমানের নামে প্রায় শতাধিক মামলা হয়েছে। তার মাঝে অর্ধ শতাধিক হত্যা মামলা হয়েছে। কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া দোসরদের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
এদিকে গত বছরে ৫ আগষ্টের পর থেকে নারায়ণগঞ্জের ওসমানীয় সম্রাজ্যের গডফাদার শামীম ওসমান পালিয়ে রয়েছে। যদিও বিভিন্ন সময় তাকে ভিডিওতে দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রে দেখা গেছে। দেশের বাইরে পালিয়ে গিয়ে শামীম ওসমান তার পরিবার নিয়ে আরাম আয়েশে জীবন পার করছে। বিপরীতে তারই বড় ভ্ইা সেলিম ওসমান দেশে থেকে এখনো নারায়ণগঞ্জে নানা ভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরীর জন্য ষরযন্ত্র করে যাচ্ছে। এমনকি মাঝে মধ্যে তার মালিকানাধীন ফ্যাক্টরী উইজডমে এসে মিটিং করে যান। এই মাসেও ৫০ লাখ টাকার বাজেটে গোপট মিটিং করার জন্য তৎপর হয়ে রয়েছেন। যদিও বিএনপি জামায়াতে নেতৃবৃন্দ একাধিকবার সেলিম ওসমানকে গ্রেপ্তারের দাবী করে আসছেন। কিন্তু প্রশাসন তাতে নিরব হয়ে আছে। সম্প্রতি সময়ে একটি ভিডিওতে দেখা যায় গডফাদার শামীম ওসমান দুবাইয়ের একটি মার্কেটে পরিবার নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছেন।
অপরদিকে বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভূমিসদস্যুতা, চর দখল, নদী দখল, বালু ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, জেলা প্রশাসনের রাজস্ব খাত ও ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, গণপূর্ত, এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, রাজনীতি, নিয়োগ-বদলি, অবৈধ গ্যাস চোরাই ব্যবসা, হাসপাতালের ঔষধ,ডিস লাইন, ইন্টারনেট, পোষাক সেক্টরের লুটপাট আর উন্নয়ন প্রকল্প- সবকিছুতেই দীর্ঘদিন আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার ভাই সেলিম ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, শামীম পুত্র অয়ন ওসমান। পুরো ওসমানীয় সম্রাজ্য এই সেক্টর গুলো নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এখন তারা পালিয়ে আরাম আয়েশে জীবন পার করছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে শামীম ওসমান তথা ওসমানীয় সাম্রাজ্য দেখভাল করছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির একটি শক্তিশালী চক্র। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের অনেকেই ওসমানীয় দালালীর ওই চক্রের অংশিদার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের সাথে সাথে গাঢাকা দেয় ওসমানীয় দখলদারদের প্রায় সকলেই। আগুণে জ্বালিয়ে দেয়া হয় শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, আজমেলী ওসমানের বাড়ি গাড়ি। আর জুলাই হত্যাসহ অনেক মামলার আসামি শামীম ওসমান বর্তমানে বিদেশে আয়েশের সাথেই দিনযাপন করছেন পরিবার নিয়ে। গুঞ্জন রয়েছে বিদেশে পালিয়ে থেকেই নারায়ণগঞ্জের কলকাঠি নাড়ছেন এই শামীম ওসমান চক্র।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৫ বছর আওয়ামীলীগের ক্ষমতাবলে নারায়ণগঞ্জে একক সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন ওসমানীয় পরিবার। শামীম ওসমানের নেতৃত্বে সরকারি সকল দপ্তর ছিলো এই ওসমানীয় দখলে। ওসমানীয় বিরাগভাজন হয়ে টিকতে পারেন নাই নারায়ণগঞ্জের সাবেক এমপি, আওয়ামী লীগের নেতা, এসপি, ডিসি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন পর্যন্ত। আর সিটি করপোরেশনের মেয়র ডাক্তার আইভীও নোঙড়া ভাষাসহ নানাভাবে আক্রমণের শিকার হন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই শামীম ওসমান তিন বার হয়েছেন সংসদ সদস্য। এমপি হওয়ার সুবাদে ভিওআইপি ব্যবসা, জ্বালানী ব্যবসার নাম করে হাজার কোটি টাকা নানা অবৈধ পন্থায় হাতিয়ে নেয় ওই পরিবারের সকলেই। ওসমানীয় অবৈধ ‘টাকার মেশিন’ ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের তেল চোরের মূল হোতা কাউন্সিলর মতি ও পুলিশের এক সময়ের সোর্স আশরাফ। এ ছাড়াও সোনারগাঁওয়ের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুম, বন্দর উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যান, সদর উপজেলার সকল ইউপি চেয়ারম্যান, নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সহ সভাপতি এম এম রানা।
আর দেশেই আটকে পরে আরেক ভাই নারায়ণগঞ্জ ব্যবসায়ীদের আতংকের নাম সেলিম ওসমান । যার সাম্রাজ্য এখন বিএনপির নেতাদের সাথে আতাত করে দেখভাল করে যাচ্ছেন বিকেএমইএ এর বিতর্কিত সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, চেম্বার অব কমার্সের সতাপতি দিপু ভূইয়া (যিনি শামীম ওসমানের পুরানো পার্টনার হিসেবে পরিচিত), বিতর্কিত শিল্পপতি মোহাম্মদ আলী, যুবদল নেতা মশিউর রহমান রনি সহ যারা বিগত সময়ে ওসমানীয় অর্থায়নে নাসিক নির্বাচনে পরাজিত হয়ে তুমুল দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বিতর্কের ঝড় তুলেন। তারাই এখন ওসমানীয় সাম্রাজ্য পরিচালনা করছেন বলে জোড়ালো অভিযোগ রয়েছে। কয়েকজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি প্রায় প্রতি মাসে বিদেশে অবস্থান করে ওসমানীয় গোপন বার্তা আদান প্রদান করছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে।