Logo
Logo
×

রাজনীতি

গ্রাহকদের চাপে স্ত্রী-সন্তানসহ নিজের প্রাণ নেন শিপলু

Icon

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

গ্রাহকদের চাপে স্ত্রী-সন্তানসহ  নিজের প্রাণ নেন শিপলু

গ্রাহকদের চাপে স্ত্রী-সন্তানসহ নিজের প্রাণ নেন শিপলু

Swapno

শহরের বাবুরাইলের বউবাজার এলাকায় একটি ফ্ল্যাট বাসা থেকে একই পরিবারের তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে গলায় গামছা পেচানো গৃহকর্তার মরদেহ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছিল এবং পাশের কক্ষের খাটের উপর ছিল স্ত্রী সন্তানের বালিশ চাপা মরদেহ। গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভূঁইয়াপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী।


তিনি বলেন, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ তিনটি উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন,  মো. হাবিবুল্লাহ শিপলু (৩৫), তার স্ত্রী মোহিনী আক্তার মীম (২৪) ও চার বছরের ছেলে আফরান। নিহত শিপলু নারায়ণগঞ্জে আমের আড়তে কাজ করতেন। বউবাজার এলাকার পলাশ মিয়ার সাততলা ভবনের চতুর্থ তলায় পরিবারসহ ভাড়ায় থাকতেন শিপলু। এর আগে তিনি রমজান নামের এক ব্যক্তির সমবায় সমিতিতে কাজ করতেন। রমজান মানুষের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন।


পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন এবং পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জামাল উদ্দিন ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। সেখানে গিয়ে দেখা যায় ভাড়া বাসার দরজা ভেতর থেকে লক করা। পরে নিহতদের স্বজন এবং স্থানীয়দের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। ভেতরে প্রবেশের পর শিপলুকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায়। অন্য একটি কক্ষে তার স্ত্রী মোহিনী আক্তার মীম এবং ছেলে আফরানকে বিছানায় অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাদের দুজনের মুখের ওপর বালিশ চাপা দেওয়া ছিল।


অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন শিপলু। দরজাটি বিকেলে ভেতর থেকে বন্ধ পেয়ে স্থানীয়রা নিহতের আত্মীয়-স্বজনের উপস্থিতিতে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তিনজনের মরদেহ দেখতে পান। “নিহত শিপলু একটি কক্ষে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলেন। অন্য একটি কক্ষে তার স্ত্রী ও সন্তানের মুখে বালিশ চাপা অবস্থায় পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হাবিবুল্লাহ শিপলু স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন।”


স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির স্থায়ী বাসিন্দা হলেও নিহত শিপলু এ এলাকাতেই বড় হয়েছেন। এ এলাকার বউবাজারে ‘সম্মিলিত সঞ্চয় তহবিল’ নামে একটি সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) ছিলেন। করোনা মহামারীর সময় সমিতির পরিচালক রজমান আলী গ্রাহকদের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলে সমিতির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে রজমান র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। ফলে সমিতির গ্রাহকরা তাদের টাকা ফেরত পাবার দাবিতে নিহত শিপলুর উপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন। সমিতির টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দায়ের করা গ্রাহকদের মামলারও আসামি নিহত শিপলু।


নিহত শিপলুর বড় ভাই অলিউল্লাহ লাভলু জানান, ‘রোববার রাত থেকে তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ফোনে যোগাযোগ না হওয়ায় সোমবার বিকেলে স্বজনরা ফ্ল্যাটে গিয়ে দরজা বন্ধ দেখতে পান। অনেক ডাকাডাকির পরও ভেতর থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। তিনি আরও বলেন, আমরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর দেখি, আমার ভাই ঝুলছে আর ভাবি ও ভাতিজার মুখের ওপর বালিশ চাপা দেওয়া।’


নিহতদের পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা এক নারী বলেন, “চারমাস আগে এই ফ্ল্যাটে ভাড়া আসে পরিবারটি। এর আগেও আশেপাশের বাড়িতেই ভাড়া থাকতো। সমিতি বন্ধ হওয়ার পর লোকজন যারা টাকা পাইতো তারা অনেক ঝামেলা করতো। কিন্তু ইদানিং তেমন লোকজন দেখি নাই।”


নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, “একটি সমিতির ম্যানেজার ছিল শিপলু। করোনাকালীন সময় সমিতিটি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অনেক গ্রাহক তাদের টাকা না পাওয়ায় মামলা করে, তাতে শিপলুও আসামি। গত সপ্তাহে ওই মামলায় হাজিরাও দিয়েছে। সে ওই এলাকাতে থাকার কারণে প্রতিনিয়ত সমিতির পাওনাদাররা তাকে টাকার জন্য তাগাদা দিতো।”


অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী বলেন, “সমিতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে অর্থনৈতিকভাবে সে বিপর্যস্ত ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, অভাব-অনটনের কারণে হয়তো সে প্রথমে তার স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে পাশের রুমে গিয়ে নিজেও গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করে।” তবে, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন