-copy-68c3e9ae4a44f.jpg)
বিতর্কে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে দুর্বল ছাত্রদল
জাতীয় নির্বাচনের মাত্র পাঁচ মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভরাডুবি বিএনপির জন্য একটি 'কঠিন বার্তা' বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ডাকসুর প্রথম এই নির্বাচনে ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা ভিপি, জিএস, এজিএস এবং ১২টি সম্পাদক পদের নয়টিতেই জয়ী হয়েছেন। শুধু তিনটি সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ছাত্রশিবিরের নির্বাচিতদের সঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছাত্রদলের প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান অনেক ছিলো। তা ছাড়া একই ভাবে গতকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ১১ হাজার ৯১৯ ভোটের মধ্যে মোট ৮ হাজার ১৬টি ভোট পড়েছে। অর্থাৎ মোট ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু বিভিন্ন কারচুপি ও অনিয়মের কথা উল্লেখ করে ভোট বর্জন করেছেন ছাত্রদল যা নিয়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে নানান সমালোচনা। সকলের মুখে একটাই বুলি শিবিরের কাছে কি এখন ধরাশয়ী ছাত্রদল নাকি গত ১৩ মাসে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে শিক্ষার্থীদের আস্থা হারিয়ে দুর্বল হয়ে পরেছে ছাত্রদল। এদিকে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে ও ছাত্রদলের কঠিন অবস্থা বিরাজমান রয়েছে। পটপরিবর্তনের গত ১৩ মাসে বিভিন্ন হাট-ঘাট-মাঠ-গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরী দখল, ঝুট কাণ্ড, চাঁদাবাজি, ডাকাতির অভিযোগসহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পরেছিলেন ছাত্রদল।
যাকে ঘিরে গত বছরের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলসহ সকল ইউনিট ও ওয়ার্ড এবং ইউনিয়নের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু গত ১ বছরে ও নয়া কমিটি গঠনের কোন আভাস নেই। এর বাহিরে ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। তা ছাড়া নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অন্ত:কোন্দল সব মিলিয়ে সর্বস্থানে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে ছাত্রদল। যাকে ঘিরে বর্তমানে ক্যাম্পাসগুলোর ভিপি নির্বাচনে পরাজয় বরণ করতে হচ্ছে তাদের সমর্থিত প্রার্থীদের। এদিকে কিছুদিন পর নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ কলেজ, কদম রসূল কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন সেই নির্বাচনে ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ অনেকটাই অনিশ্চিত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে বর্তমানে সংখ্যায় বিপুল এবং ক্ষমতায় প্রভাবশালী হয়ে ও ছাত্রদলের এই দুর্বলতা অনেকটাই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এর আগে নারায়ণগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কমিটি না থাকলে ও তারা ছিলেন ব্যাপক শক্তির অধিকারী সব জায়গায় ছিলো আলাদা রকমের একটি গ্রহণযোগ্যতা কিন্তু ছাত্রদল সেই ছাত্রলীগের মতোই সংখ্যায় বিপুল হলেও প্রকাশ্যে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এদের কপাল পুড়েছে। যাকে ঘিরে গত ১ বছরেও কেন্দ্রীয় ছাত্রদল পরীক্ষিত যোগ্যদের হাতে তুলে দিতে পারেনি কমিটি।
সূত্র বলছে, গত ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নাহিদ হাসান ভূঁইয়াকে সভাপতি এবং জুবায়ের রহমান জিকুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নতুন আংশিক কমিটির অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ। একই দিনে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের ৬ সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছিল রাকিবুর রহমান সাগরকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল রাহিদ ইসতিয়াক সিকদারকে। এদিকে ধার্য সময় সাপেক্ষে মহানগর ছাত্রদল সকল ইউনিট কমিটি ও নিজেদের কমিটি পূর্নাঙ্গ করতে পারলে ও জেলা ছাত্রদল ছিলেন পুরো রূপে ব্যর্থ। একইভাবে আন্দোলন সংগ্রামের নামে টাকা তুলে নিজেদের পকেট ভারী করাসহ নানা অভিযোগ উঠতে থাকে তা ছাড়া গত ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে গত ৫ আগষ্টের আগমুহুর্ত্ব পর্যন্ত জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নাহিদ হাসান ভূঁইয়া ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের রহমান জিকু। আর মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ রাহিদ ইস্তিয়াক সিকদারকে এদেরকে ১ সেকেন্ডের জন্য রাজপথে দেখা যায়নি। এদিকে জেলা যুবদলের ব্যানারের পিছনে নাহিদকে কিছুদিন লক্ষ্য করা গেলেও কোন আন্দোলনে দেখা যায়নি জিকুকে। একইভাবে বাবা জাতীয় পার্টির করায় এলাকায় বীরদর্পে ছিলেন ছেলে মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাহিদ ইস্তিয়াক সিকদার। শুধু তাকে গত ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর সর্বশেষ বিএনপির হরতালে মিশনপাড়া থেকে তাকে পিকেটিং করতে দেখা গিয়েছিলো এর পর দলীয় কোন আন্দোলনে ছিলো না তার স্পর্শ। কিন্তু গত ৫ আগষ্টের পরবর্তী সময়ে ছাত্রদলের এই সকল নেতাকর্মীরা ফুলে ফেপে অনেকটাই মোটা-তাজা হয়ে গেছেন। গড়ে তুলেছেন নানা ব্যবসা। তা ছাড়া এদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে রয়েছে গরু ডাকাতি, ঝুট সেক্টরসহ পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণসহ ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ যা গত ৫ আগষ্টের পরপরই আসফলন পেতে থাকে।
যাকে ঘিরে গত বছরের (১৭ সেপ্টেম্বর) জেলা ও মহানগর ছাত্রদলসহ প্রত্যেকটি ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, খুব শিগগিরই নতুন কমিটির ঘোষণা করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন কমিটি গঠনের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এর ফলে ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। ইতিমধ্যে ছাত্রদলের আগামী নয়া কমিটিতে স্থান পেতে ইতিমধ্যে ডজনখানিক নেতা প্রস্তুত রয়েছে তা ছাড়া দফায় দফায় কমিটিতে স্থান পেতে রেখেছেন ক্লিন ইমেজ কিন্তু অনেকে ১ বছর প্রায় কাছাকাছি সহ্য করতে না পারায় জড়িয়ে পরছেন নানা বিতর্কে হারাচ্ছেন গ্রহণযোগ্যতা হচ্ছেন দুর্বল। ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা যেখানে সারাদেশে হাট-ঘাট-মাঠ দখল করেছে, চাঁদাবাজিতে অংশ নেয়ায় ফলাও করে মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, এতে একদিকে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো যেমন দুর্বল হয়েছে, তেমনি মানুষের মনেও বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। একইভাবে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তাদের বিরুদ্ধে ও তৈরি হয়েছে নানা নেতিবাচক ধারণা যাকে ঘিরে একে একে ছাত্রদলের নিয়ন্ত্রণে থাকা ক্যাম্পাসগুলো দখলে নিচ্ছেন শিবির। একইভাবে কলেজের বাহিরের রাজনীতিতে ও গ্রহণযোগ্যতা হারানোর পথে ছাত্রদল। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের জেলা ও মহানগরে কোন কমিটি না থাকায় দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদলের ব্যানারে কোন মিছিল-মিটিং লক্ষ্য করা যায় না। একইভাবে কেন্দ্রীয় নানা পোগ্রাম দিলে ও ছাত্রদল নিস্কিয় ভূমিকা পালন করেন। যাকে ঘিরে ক্যাম্পাসগুলোর পাশাপাশি মাঠ থেকেও হারিয়ে যাওয়ার পথে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল।