Logo
Logo
×

রাজনীতি

ডাকসুতে হার বিএনপির জন্য অশনি সংকেত

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

ডাকসুতে হার বিএনপির জন্য অশনি সংকেত

ডাকসুতে হার বিএনপির জন্য অশনি সংকেত

Swapno

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসুর নির্বাচনে এবার অভাবনীয় জয় পেয়েছে ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেল ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ডাকসুর প্রথম এই নির্বাচনে ওই প্যানেলের প্রার্থীরা ভিপি, জিএস, এজিএস এবং ১২টি সম্পাদক পদের নয়টিতেই জয়ী হয়েছেন। শুধু তিনটি সম্পাদক পদে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ছাত্রশিবিরের নির্বাচিতদের সঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ছাত্রদলের প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান অনেক। এই নির্বাচনের ফলাফলকে আগামীর রাজনীতির একটি চিত্র বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ডাকসুতে বিএনপির এমন হার আগামীর রাজনীতির জন্য অশনি সংকেত। এটি এখন ডাকসুতে পরিলক্ষিত হয়েছে, ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে এটি সারাদেশে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পেছনে বিশেষ কয়েকটি কারণ রয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর বিএনপি নেতাকর্মীরা যেখানে সারাদেশে হাট-ঘাট-মাঠ দখল করেছে, চাঁদাবাজিতে অংশ নেয়ায় ফলাও করে মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, এতে একদিকে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো যেমন দুর্বল হয়েছে, তেমনি মানুষের মনেও বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তাছাড়া কথায় কথায় জামায়াত-শিবির ট্যাগ দেয়ায় এখন সাধারণ মানুষের মনে আওয়ামী লীগের মতোই বিএনপিকে নিয়ে একই ধারণা তৈরি হচ্ছে। তারা বলছেন , জামায়াতকে রাজনৈতিক মাঠে ধরাশায়ী করতে আওয়ামী লীগের মতোই নানা ট্যাগ দেয়ার চেষ্টা করেছে বিএনপিকে। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি বলে গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ যেভাবে মানুষকে কাবু করার অস্ত্র হিসেবে এইসব ট্যাগ ব্যবহার করেছে বিএনপিও ৫ আগস্টের পর একই কায়দা ব্যবহার করায় মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ডাকসুর নির্বাচনে এটি প্রতিফলিত হয়েছে। যার কারণে জামায়াত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিএনপি প্রার্থীদের কোন বিষেদগার কাজে আসেনি, উল্টো সেটি সাপেবর হয়েছে। রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন, জুলাই বিপ্লবের পর বিএনপি নেতাদের অবস্থান মানুষ বুঝতে পেরে গেছে।

নারায়ণগঞ্জের মতো জেলায় হেন অপকর্ম নেই একসময় ওসমান পরিবার, শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, আজমেরী ওসমান, অয়ন ওসমান এবং তাদের বাহিনীরা করেনি, নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতারাও ছিলে রাক্ষুসে। অথচ ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর এগুলো শুধু হাতবদল হয়েছে। এসব কিছু দখলেরর সিংহভাগই বিএনপি নেতারা। কেউ ঝুট ব্যবসা সামলাচ্ছেন, কেউ আওয়ামী লীগ নেতাদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছন, কেউ তাদের সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে, কেউ আবার আওয়ামী লীগের দখলে থাকা মাঠ-ঘাট-হাট দখল, চাঁদাবাজির স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। এসবের বিনিময়ে নগদ অর্থ কিংবা ফিফটি ফিফটি পার্সেন্টেজ, মাসোহারাসহ নানাভাগে ফ্যাসিস্টদের সাথে ভাগাভাগি করছেন। এখনো ভিন্ন জেলায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের ফেলে যাওয়া ব্যবসার ভাগ পাচ্ছেন, কেউ দেশের বাইরে বসেই বিএনপি নেতাদের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা চালাচ্ছেন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর গাইডলাইন দিচ্ছেন। যার ফলে ফ্যাসিস্টদের দোসররা পালিয়ে গিয়েও পুরনো সবকিছুর সুবিধা পাচ্ছেন। এই বিষয়টি সাধারণ মানুষকের খুবভালোভাবে নাড়া দিয়েছে। তাই কোন ধরণের ন্যারাটিভ তৈরি করেও বিশেষ সুবিধা করতে পারছেন না বিএনপি। যার প্রতিফলন দেখা গিয়ে ডাকসু নির্বাচনে।

যে ডাকসুতে হার বিএনপির

জন্য অশনি সংকেত

শেষ বার্তা দিয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের এসব কর্মকাণ্ড যদি এখনই না শুধরানো হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচনে এর জন্য চড়া মাশুল গুনতে হতে পারে বিএনপিকে। ডাকসু নির্বাচন বিএনপির জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছে রাজনৈতিক বোদ্ধারা। মনোনয়ন ও দখল বাণিজ্য নিয়ে বিএনপির নেতায় নেতায় যখন দ্বন্দ্ব আর সংঘাত তখন জামায়াত ইসলামীসহ অন্যান্য দলগুলো ব্যস্ত নিজেদের সংগঠিত করতে। কচ্ছপ আর খরগোশের সেই বিখ্যাত গল্পটা বিএনপির জন্য শিক্ষা হতে পারে। ধীর গতির কচ্ছপ কী করে জয়ী হয়, সেই দীক্ষাটা যদি এবারের ডাকসু নির্বাচন থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা নিতে না পারে তাহলে আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে চড়া মূল্য দিতে হবে। নেতিবাচক কাজ থেকে সরে এসে সংগঠন এবং নেতাকর্মীদের স্বচ্ছ রাজনীতির দিকে ধাবিত না করতে পারলে ডাকসু নির্বাচনের নিজেদের করুণ পরিণতি বরণ করতে হতে পারে জাতীয় নির্বাচনেও। নারায়ণগঞ্জের নেতাদের জন্যও এই নির্বাচন অশনি সংকেত।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন