গিয়াসউদ্দিনের ইউটার্নে কঠিন মনোনয়ন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68c17bf130192.jpg)
গিয়াসউদ্দিনের ইউটার্নে কঠিন মনোনয়ন
আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে এয়োদশ নির্বাচনের পূর্বে দেশের ৩৯টি আসনের মতো নারায়ণগঞ্জের ৩টি আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশের পরপরই সেই আসনগুলোর মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এদিকে বিগত দিনে (সিদ্ধিরগঞ্জ-ফতুল্লা) নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি ছিলো বাকি ৪টি আসনের থেকে বেশি প্রভাবশালী কারণ এই আসনে বিগত দিনে দখল করে রেখেছিলেন কুখ্যাত গডফাদার হিসেবে পরিচিত শামীম ওসমান। কিন্তু পটপরিবর্তনে সেই গডফাদারা পালিয়ে গেলে সেই আসনের জনগণের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিতি ২০০১ সালে এই আসনে বিএনপির সাংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের নাম আলোচনা উঠে আসে। কিন্তু পটপরিবর্তনের ৩ থেকে ৪ মাস পরপরই গিয়াস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বা নারায়ণগঞ্জের সকল আসনেই যে কোন একটিতে মনোনয়ন চাইলে ৪ আসনে সৃষ্টি হয় হ-য-ব-র-ল অবস্থা এমতা অবস্থায় ছাত্রদল-যুবদলের নেতাকর্মীরা কেউ কেউ এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে উঠেন আবার বিএনপি থেকে বিগত দিনে পদত্যাগ করা ও অনেকেই মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আসতে চান। গিয়াসবিহীন আসনটি প্রভাব ছিন্ন হওয়ার পথে হাঁটতে নিলে গত সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে ফতুল্লা থানা বিএনপির এক চায়ের আড্ডায় গিয়াস উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকেই নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণায় ঘুম হারাম হয়ে যায় আসনটির মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকের। বর্তমানে গিয়াসের ইউটার্নে বেকায়দায় আসনটির ডজনে ডজনে জন্ম নেওয়া মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তা ছাড়া হঠাৎ এক হেভিওয়েট প্রার্থীর চাপে বাকি কোনঠাসা বাকি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তা ছাড়া ইতিমধ্যে সেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ফতুল্লায় এককভাবে ফতুল্লার সন্তান এমন প্রার্থী হিসেবে জনগণ চায় এমন প্রপাগান্ডায় ছড়ালে ও মূলত অভিজ্ঞতা, জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক দক্ষতা খুঁজছে জনগণ যা পুরো দিকেই পরিপূর্ণ গিয়াস উদ্দিন।
সূত্র বলছে, পটপরিবর্তনের পর নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের রাজনীতিতে দিন দিন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াসউদ্দিন। সেই সময় এই আসন নিয়েই কাজ ব্যস্ত সময় পাড় করছিলেন তিনি হঠাৎ নারায়ণগঞ্জ-৩ সোনারগাঁও আসন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেন গিয়াস উদ্দিন। সে সময় সেই আসন থেকে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ৪ আসনে একের পর এক প্রার্থী জন্ম নেয়। বিভিন্ন্ স্থানে (এমপি হিসেবে দেখতে চাই) ব্যানার লাগায় অনেকেই। তা ছাড়া বিগত দিনে প্রভাবশালী আসন হিসেবে আলোচিত আসনটিতে যোগ্য-অযোগ্য অনেকেই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নিজেদের জাহির করতে নেমে যায়। যাকে ঘিরে প্রভাবশালী আসনটি হাস্যরসে পরিণত হতে শুরু করে। এদিকে বর্তমানে পর্যালোচনায় এসেছে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে সীমানা পুনর্বিন্যাসে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছিলো। বর্তমানে এই আসনে সিগন্যালের আশায় মাঠে না নেমে নেতাকর্মীদের দিয়ে মেডিকেল ক্যাম্প দিয়ে আলোচনায় থাকতে চাইছেন সাবেক পদত্যাগকারী নেতা শাহ-আলম। ২০১৮ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় ক্ষোভে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। এরপর প্রায় এক দশক তিনি রাজনীতি থেকে কার্যত আড়ালে ছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বসন্তের কোকিলের মতো আবার সক্রিয় হতে চাইছেন এবং হাইকমান্ডের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে। তা ছাড়া চলতি বছরের গত ৩ এপ্রিল ফতুল্লায় নিজ কার্যালয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন শাহ আলম। সেখানেই তিনি আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলেন, আমি নমিনেশন পাওয়ার যোগ্যতা রাখি। ইনশাআল্লাহ এবার নির্বাচন করব। জনগণের প্রিয় প্রতিনিধিকেই এবার সুযোগ দেওয়া হবে। নিজের নেতৃত্বের শক্তি তুলে ধরে তিনি দাবি করেন, তার সময়ে জেলা বিএনপির কমিটিতে ফতুল্লার ৩৬ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তার ভাষায়, মানুষ তখন বলেছিল এটা ফতুল্লার কমিটি নাকি জেলার কমিটি! আমি চাইতাম সবাইকে জায়গা দিতে। কিন্তু তার বিগত দিনের সেই পদত্যাগ কান্ড এবার তার জন্য কাল হয়ে দাড়াঁতে পারে। তা ছাড়া এই আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি। তিনি বিগত দিনে শামীম ওসমানের দ্বারা অত্যাচারিত-নিপীড়িত হয়েছিলেন। এ ছাড়া ও দলের দূসময়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার থাকা এই রনি নির্বাচন করতে প্রয়োজন তিন ক্রাইটেরিয়ায় এগিয়ে থাকলে ও ফিটনেসে তিনি পিছিয়ে পরেছেন।
তা ছাড়া গত ৫ আগষ্টের পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জমা পরেছে কেন্দ্রে। তা ছাড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ সমীনা পুনর্বিন্যাসের পর থেকেই দুটানায় রয়েছে। অন্যদিকে এই আসনের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সাংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ৪ আসন থেকে মনোনয়ন চাইলে ও বর্তমানে তার মূল চাওয়া হিসেবে বিবেচনায় রয়েছে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসন। কারণ তার সবচাইতে বেশি ভোটের স্থান হিসেবে পরিচিতি সিদ্ধিরগঞ্জ সীমানা পুনর্বিন্যাসে ৩ আসনের সাথে যুক্ত হয়েছেন। তা ছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। তিনি ও এবার নয়া মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় এই আসনে এবার কতটুকু মূল্যায়িত হবেন সেটাই দেখার বিষয়। তা ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিএনপি জোটের সাথে নির্বাচনে গেলে মুফতি মনির কাশেমী বিএনপির প্রার্থী হবেন। কিন্তু এবার পাচ্ছেন না ধানের শীষ প্রতীক। লড়তে হবে নিজ দলের প্রতীকে। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে আলোচনায় এসেছিলেন। বিতর্কিত সেই নির্বাচনে পেয়েছিলেন লাখ খানেক ভোট। মূলত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কারনেই অচেনা মুখ হয়েও বিপুল ভোট লাভ করেন। এবার ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের পর ফের নির্বাচন করতে মুখিয়ে আছেন তিনি। ইতোমধ্যে বিএনপির সাথে জোট করলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার। তবে বিগত নির্বাচনের মত এবার জোটের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ থাকছে না। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থীকে তার নিজ দলের প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। কিন্তু আসন পুনর্বিন্যাসে যোগ্য প্রার্থীতা সংকট পূরণে ইউটার্ণ নিয়ে পুরনো সাজানো বাগানের আসনেই এসেছেন এবং নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তা ছাড়া ইতিমধ্যে গিয়াস একটু পিছপা হওয়ায় সেখানে তার কর্মী হিসেবে পরিচিতসহ যুবদল-ছাত্রদল নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ব্যানার-ফেস্টুনে উঠে আসেন। কিন্তু হঠাৎ গিয়াস উদ্দিনের ইউটার্নে ফের উজ্জ্বীবিত ও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের রাজনীতি। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের রাজনীতিতে যুক্ত হলো আরেক নয়া সমীকরণ।