নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এড.আবুল কালাম
জনগণের আস্থায় বারবার এখানে নির্বাচিত হয়েছি

লতিফ রানা
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
-copy-68c172bb48a12.jpg)
জনগণের আস্থায় বারবার এখানে নির্বাচিত হয়েছি
# আমাদের সময়ে নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ সকল উন্নয়ন হয়েছে, যার সুফল এখনো এই জেলার মানুষ ভোগ করছে
আমরা পারিবারিকভাবেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র রাজনীতির সাথে জড়িত এবং আমাদের প্রতিনিধিত্বেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের ব্যাপক দৃশ্যমান উন্নয়ন ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জ ও বন্দরের যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য রক্ষা, ধর্মীয় ব্যবস্থাসহ সকল বিভাগেই হয়তো জিয়াউর রহমান আর নয়তো খালেদা জিয়ার হাতের ছোঁয়া পড়েছে। আমরা আমাদের উন্নয়ন কখনও প্রচারে আনার জন্য ব্যস্ত ছিলাম না, বরং মানুষের উপকারে আসে এবং সুফল পায়, এমন ধরণের উন্নয়নের জন্যই আমরা দৃশ্যমান কাজ করে গেছি। গতকাল মঙ্গলবার যুগের চিন্তা’র সাথে একান্ত সাক্ষাতকালে এসব মন্তব্য করেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত তিনবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য এবং আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি হতে মনোনয়ন প্রত্যাশী এডভোকেট আবুল কালাম। এবারও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এই আসনের জনগণের উন্নয়নে নিজেকে নিবেদিত করতে চান বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, বিগত সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে আমরা দেখেছি এই আসনের ধারাবাহিক উন্নয়ন ছাড়া তেমন কোন দৃশ্যত উন্নয়ন ঘটেনি। অন্তত জনপ্রতিনিধিরা যেভাবে উন্নয়নের প্রচার চালিয়েছেন তেমন কৃতিত্ব দেওয়ার মতো এবং উল্লেখ করার মতো দৃশ্যনীয় কোন অভয়ব দেখাতে পারবেন বলে আমার মনে হয় না। বরং আমরা বলতে পারি এগুলো আমরা বিএনপির সময়ই করতে সক্ষম হয়েছি। স্বাধীনতার মহান ঘোষক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করে, তখন থেকেই আমার পিতা হাজী জালালউদ্দিন সাহেব এই দলের সাথে সম্পৃক্ত। জিয়াউর রহমানের সময় থেকেই তিনি নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ওনার সময় নারায়ণগঞ্জ খানপুর হাসপাতালের ভূমি অধিগ্রহণ থেকে হাসপাতালের জন্য জায়গা দখল করা, নারায়ণগঞ্জ কলেজ, শহরের গণবিদ্যা নিকেতন, নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল ও জিয়া হল প্রতিষ্ঠা করা, এগুলো সব কিছুই শহীদ রাষ্ট্রপ্রতি জিয়াউর রহমানের সরকারের আমলে হয়েছিল এবং তখন আমার পিতা সংসদ সদস্য ছিলেন।
নিজে এই আসনের দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ের উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ১৯৯১ সালে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে এই আসনের জনগণের ভোটে আমি প্রথম এবং এর পরে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে মোট তিনবার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হই। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সময় নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের আজকের যে ভবন; আমি সেটার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি একই সাথে এই হাসপাতালের এম্বুলেন্সের ব্যবস্থাও করি। আমি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার (বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন) জন্য বিশেষ বরাদ্দ (তৎকালীন সময়ে ৫ কোটি টাকা)’র ব্যবস্থা করেছি। নারায়ণগঞ্জ মহিলা কলেজের মাটি ভরাট করা দেয়াল নির্মাণ করা, ছাত্রীদের জন্য নিবাস নিয়ে আসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আপনি যদি বন্দরের কথা বলেন, বন্দরের মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কটি যখন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল আমি এমপি থাকাকালীন বিএনপি সরকারের সময় এটা পাকা করে যাতায়াতের জন্য তৈরি করি। বন্দরে কোন কলেজ ছিল না, আমরা বন্দরের কদম রসুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করি। যা বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উন্নীত হয়েছে। আজকে বন্দরে সিটি কর্পোরেশনের যে কার্যালয় আছে, আমি কদম রসুল নামে পৌরসভা তৈরি করার কারণেই কিন্তু আজকে এখানে কার্যালয় হয়েছে। বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তৈরি করার জন্য জায়গা পাইনি, তাই আমি নিজস্ব জায়গার উপরে এবং আমার আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে জায়গা নিয়েই কিন্তু আজকের এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছি। বন্দরের বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা তিতাস গ্যাসের লাইন স্থাপন করেছি। বন্দরে ব্যবহারযোগ্য পানির অভাব ছিল, আমরা ডিপ পাম্প স্থাপনের ব্যবস্থা করেছি। যার মাধ্যমে বন্দরে পানির সমস্যা লাগবের চেষ্টা করেছি। বন্দরের এমন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই, যেখানে আমাদের মাননীয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতের ছোঁয়া পড়েনি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যখনই ক্ষমতায় আসে, আমরা জনগণের প্রত্যাশাকে ঈমানদারীর সহিত প্রতিপালন করে থাকি। তাই নারায়ণগঞ্জ ও বন্দরের যাতায়াত ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য রক্ষা, ধর্মীয় ব্যবস্থাসহ সকল বিভাগেই কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অবদান অনস্বীকার্য।
তিনি বলেন, এর আগে গত স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্বাচনগুলোর কারণে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের উপর মানুষের একটি বিরূপ মনোভাব তৈরি হয়েছে। সেসব নির্বাচন কমিশন দেশের মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার পরও যতটা না মানুষের জন্য কাজ করেছেন, তার চেয়েও বেশি সরকারের অনুগত হওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাই নির্বাচন কমিশন সরকারের একটি নিজস্ব বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল। যার ফলে দিনের ভোট রাতে হয়েছে, বিনা ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। এমনকি যোগ্য ও সঠিক ব্যক্তিরাও অযোগ্য হয়ে গেছে, অনেক প্রার্থীকে নির্বাচিত হওয়ার পরও সেসব নির্বাচন কশিনের ভূমিকার কারণে অকৃতকার্য হতে দেখা গেছে, ফলাফল মেনুপুলেট করা হয়েছে। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর আসা এই সরকারকে নির্বাচন নিয়ে আন্তরিক হতে দেখা যায়। তাই আমরা আশা করবো বর্তমান নির্বাচন কমিশন আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে যাবে। আমরা আশা প্রকাশ করবো এই নির্বাচনটি একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। যেখানে প্রার্থী ও ভোটাররা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের ভোটাধিকার, নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করতে সফল হবে। আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা প্রত্যাশা করবো এই নির্বাচন কমিশন থেকে পূর্ণাঙ্গ এবং নিরপেক্ষ সহযোগিতা পাবো।
তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনটি শীতলক্ষ্যার নদীর মাধ্যমে দুইভাগে বিভক্ত। এর পূর্বাংশে বন্দর এবং পশ্চিমাংশে সদর বা শহর এলাকা। তাই নদীর পূর্বাংশের বন্দর থেকে শহরে প্রতিদিন সর্বসাকুল্যে প্রায় পাঁচ লক্ষের মতো মানুষ যাতায়াত করে থাকে। নদীর কারণে ঝর-বৃষ্টি এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানাবিধ সমস্যার কথা বিবেচনা করে বন্দরবাসীর প্রাণের দাবি হিসেবে আমরা হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ এলাকায় গ্র্যান্ডট্রাক রোডের শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করি। এর জন্য ২০০৬ সালে হাজীগঞ্জ এলাকায় আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আমরা বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পেয়েছি ঐখান দিয়ে সেতু হলে তা একদিক দিয়ে বন্দর ও শহরবাসীর মধ্যে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করবে, অন্যদিক দিয়ে লিংকরোড থেকে হাজীগঞ্জ হয়ে মোগরাপাড়া দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের যানবাহন গুলো শহরে কোন প্রকার যানজট সৃষ্টি না করেই চলাচল করতে পারতো। এর সাথে পশ্চিমপারে নারায়ণগঞ্জ-আদমজী সড়ক এবং পূর্বপারে মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কটিও কার্যকরী হয়ে উঠতে পারতো। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে পরবর্তীতে কুচক্রী মহলের চক্রান্তের শিকার হয়ে বিএনপি আর ক্ষমতায় আসতে পারেনি এবং এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারিনি। এরপর যারা এতবছর যাবত কুক্ষিগত করে সরকারের দায়িত্ব ছিল, এই দীর্ঘ সময়েও তারা একটি সেতু দিতে পারেনি। হয়তো আল্লাহর ইচ্ছে; এই কাজটি আল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত ধরে এবং আমাদের তারুন্যের প্রতীক আমাদের আগামী দিনের দেশ নায়ক তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে এই অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত হবে। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বন্দরবাসীর দীর্ঘদিনের সেই আকাঙ্খিত সেতুটি আমরা তাদের উপহার দিতে পারবো বলে আমি আশাবাদী।
সাবেক এমপি বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জনগণই আমার পিতা হাজী জালালউদ্দিন সাহেবকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। আজকে আমার যে পরিচয়, আমি যে একজন সংসদ সদস্য ছিলাম তার সম্পূর্ণ অবদানও এই জনগণের। জনগণ আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে, আমাদের বিশ্বস্ততার প্রতীক হিসেবে ধরে নিয়েই বারবার নির্বাচিত করেছেন। তাই যেহেতু এখানকার মানুষ বিগত সময়ে আমার পিতার মাধ্যমে কল্যাণকর কাজ হতে দেখেছেন, আমাকেও তাই তিনবার নির্বাচিত করে সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তাই আমার বিশ্বাস আগামী দিনেও এই আসনের জনগণ আমাকে দীর্ঘদিনের রাজনীতির সঙ্গী হিসেবে সুযোগ করে দিবেন। এই এলাকার জনগণের ভালমন্দ যা কিছু আছে, তা আমার চেয়ে ভালোভাবে কেউ অনুভব করতে পারবে না বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। ইনশাআল্লাহ আমি আগামী দিনে নির্বাচিত হতে পারলে তাদের প্রত্যাশা পূরণে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবো।