
পোষ্টারে দেখা মিলল ওসমানদের
ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামীম ওসমান সহ পুরো ওসমান পরিবারের কাছে বিগিত সাড়ে ১৫ বছর জিম্মি ছিল নারায়ণগঞ্জ বাসি। কেননা তাদের বিশাল ওসমানীয় সম্রাজ্য বাহিনী ছিল। এছাড়া ওসমান পরিবারের প্রয়াত নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমান আর শামীম ওসমানের পুত্র ওয়ন ওসমানের নিয়ন্ত্রনে নানা অপরাধ জগত চলত।
কিন্তু ২০২৪ সনে ৫ আগষ্টের পরে ওসমান পরিবারের সাথে তাদের বাহিনীর পতন ঘটেছে। পতনের সাথে তারা পালিয়ে রয়েছেন। গত ৬ মাসে ওসমানদের দেখা না মিললেও এত দিন পরে পোষ্টারে তাদের দেখা মিলেছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের কোন দেখা মিলে নাই। যদিও আজ থেকে রাজপথে নামার কর্মসূচি রয়েছে। কিন্তু আদৌ কি নেতাদের দেখা মিলবে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ছেলেরা রাতের বেলা পালিয়ে পোষ্টার ব্যানার টানিয়েছে। যা নিয়ে শহরে হৈ চৈ শুরু হয়েছে। সেই সাথে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বোদ্ধ মহল প্রশ্ন তোলেন কারা রাতের বেলা এই পোষ্টার পেষ্টিং করেছে, যেই দলের সভানেত্রী ইতোমধ্যে পালিয়েছে। তাহলে তাদের পোষ্টার টানালো কারা। যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জানাযায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থান ও সরকারি দপ্তরের দেয়ালে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। পোস্টারে বড় করে লেখা রয়েছে শেখ হাসিনাতেই আস্থা। অথচ গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জের ‘গডফাদার’ খ্যাত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের ছবি দেখা যায়। পোষ্টারে নিচে লেখা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা কালিন সময়ে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেন।
যা এখনো কমিটি বিহীন হয়ে রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে কমিটি বিহীন সংগঠনের কারা পোষ্টার পেষ্টিং করলো। ২৩ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে এসব পোস্টার সাঁটানো হয়। সরকারি তোলারাম কলেজ, জেলা পরিষদের ডাক বাংলো, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের দেয়াল, সরকারি মহিলা কলেজ সহ কয়েকটি স্থানে এসব পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। তার কয়েক দিন পরেই নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজের ফটকে শেখ হাসিনাতেই আস্থা রাতের বেলা পোষ্টার টানানো হয়। এই পোষ্টারে উপরে বড় করে আজমেরী ওসমানের ছবি রয়েছে।যা দিনের বেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
অপরদিকে আর এই নিয়ে ক্ষোভ তৈরী হয় ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থী দের প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। এছাড়া নিষিদ্ধ এই ছাত্র সংগঠনের এই পোস্টারিং-এর বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা একত্রে শহরে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন। তারা পোস্টারিং করা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছেন।
দলীয় সুত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর আওয়ামী লীগ,যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ সহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের দেখা মিলে নাই। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সেক্রেটারি এড খোকন সাহা, যুবলীগের শাহাদাত হোসেন সাজনু, আলী রেজা উজ্জল, শাহ নিজামসহ শামীম ওসমানের অনুসারীদের দেখা মিলে নাই।
২০২৪ সনের জুলাই-আগস্টে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন।
তথ্যমতে, ইতোমধ্যে শামীম ওসমান, ওয়ন ওসমানসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। গত বছরের ১৯ জুলাই শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে আন্দোলনকারীদের দমাতে নির্বিচারে গুলি চালায়।
৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তও ছিল শামীম ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনীর সশস্ত্র মহড়া। যখনি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়েছে তা প্রকাশ হয় তখন থেকে ওসমান পরিবারের কেউ দেখা যায় নাই। যদিও কয়েক মাসে পড়ে প্রথমে ভারতে, পরে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তাকে দেখা গেছে শামীম ওসমানকে। তার অনুসারী ঘনিষ্ঠদেরকেও তিনি সেখানে ব্যবস্থা করেন।