রূপগঞ্জের লঙ্কাকাণ্ডে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই গ্রুপ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

রূপগঞ্জের লঙ্কাকাণ্ডে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই গ্রুপ
রূপগঞ্জ উপজেলায় আধিপত্য ও বিসমিল্লাহ আড়ৎ দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও সেলিম প্রধানের হয়ে দুই গ্রুপের তুমুল সংঘর্ষের তাণ্ডবে এক পক্ষে প্রকাশ্যে ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম ও অপর পক্ষে পিছনে থেকে ইন্দন ও সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী পাঠিয়েছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান। যা নিয়ে বর্তমানে তুমুল সমালোচনার ঝড় বইছে রূপগঞ্জ জুড়ে। অনেকেই বলছে আড়ৎ দখলের মধ্য দিয়ে মাহবুব ও রফিক তাদের পূর্ব শত্রুতার জের মিটিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আড়ৎ দখলকে ঘিরে রূপগঞ্জের সন্ত্রাসী খ্যাত সাংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজির পিএস উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমানের কাছ থেকে মাসিক মোটা অংকের সুবিধার লোভে এই আওয়ামী দোসরের পক্ষে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু গ্রুপ ও অনলাইন ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানের পক্ষে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির গ্রুপের ব্যাপক তাণ্ডবে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিলো রূপগঞ্জ।
সে সময় বিএনপি নেতা দিপু ভূঁইয়ার নির্দেশনায় রফিকুল ইসলাম ও বিএনপি নেতা কাজী মনিরুজ্জামান মনিরের নির্দেশনায় মাহবুবুর রহমান তাণ্ডবে জড়িয়ে পরেছিলেন। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই গ্রুপের প্রকাশ্যে গোলাগুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, ব্যাপক অগ্নিকাণ্ড, লুটপাটের ঘটনায় দুই গ্রুপের আহত ৩০। এদিকে গত ৫ আগষ্ট পটপরির্বতনের পর থেকেই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশর সাথে তাল মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্নস্থানে নিজের দলের নেতাকর্মীদের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
যাকে ঘিরে বর্তমানে বিএনপি থেকে আস্থা উঠে যাচ্ছে সাধারণ জনগণের। এদিকে অনেকেই বলছে এক দল খেয়ে গেছে আরেক দল খেতে প্রস্তুত হয়ে উঠেছে। যাকে ঘিরে আগামী নির্বাচনে বিএনপি পক্ষে থাকা ভোট ব্যাংক তারাই শূন্য করছেন। যাকে ঘিরে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বিভিন্ন জেলায় অপকর্মের সাথে জড়িত নেতাদের চিহ্নিত করে দল থেকে বহিস্কার বা কমিটি ভেঙে দিচ্ছেন। এ ছাড়া ও বারবারই নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য কঠিন বার্তা দিচ্ছেন তারেক রহমান।
কিন্তু তার এই বার্তাকে বৃদ্ধা আঙ্গুলী দেখিয়ে রূপগঞ্জের তাণ্ডবে রূপগঞ্জে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক। এদিকে বিগত দিনে জেলা বিএনপি বা অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলো বেশিভাগই ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ কেন্দ্রিক হলে ও এবার দিপু ভূঁইয়া ও কাজী মনিরের ইন্দনে রূপগঞ্জ কেন্দ্রিক কমিটি হয়েছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের। আর একই সংগঠনের দুই ভাইটাল পথের নেতা এক উপজেলায় আর দুই বলয়ের হওয়ায় নিজেদের মধ্যে আধিপত্যকে ঘিরে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
যাকে ঘিরে বর্তমানে এই জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি দ্রুত ভেঙে যোগ্য নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের জোর দাবি জানিয়েছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান কমিটি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন যুগ্ম আহ্বায়ক। এদিকে এর আগে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কমিটিতে ছিলেন আনেয়ার শাহাদাৎ সায়েম ও মাহবুবুর রহমান। সে সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই জনই রূপগঞ্জের দুই বলয়ে হওয়ায় তাদের সাথে ঐক্য ছিলো না। তারা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আলাদা ব্যানারে দুই জন দলীয় কর্মসূচি পালন করতেন। তা ছাড়া এর আগে ও ২০২৩ সালের (২৫ জানুয়ারী) শহরের দেওভোগে জান্নাত কনভেনশন হলে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সম্মেলন হয়।
সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিতিতেই এদের সামনেই রফিক ও মাহবুব গ্রুপের ব্যাপক সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিলো দেওভোগ আখড়া এলাকা। পূর্ব শত্রুতা এবং এক উপজেলার দুই বলয়ের নেতাদের মাধ্যমে কমিটি হওয়ায় দলে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধমান। সব দিক বিবেচনায় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি পূর্ণগঠনের আহ্বান জানাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। তা না হলে আগামীতে দলে আরো কঠিন বিশৃঙ্খলার মতো কর্মকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এদিকে ২০২৩ সালের (২৯ আগষ্ট) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠন করা হয়। যেখানে আহ্বায়কের দায়িত্ব পান জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রূপগঞ্জের কাজী মনির বলয়ের মাহবুবুর রহমান অন্য দিকে সাধারণ সম্পাদক সোনারগাঁও এর সালাউদ্দিন সাল্লু ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রূপগঞ্জের রফিকুল ইসলাম দুই জনই বিএনপির নিবাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপুর সমর্থক।
পরবর্তীতে একই বছরের (১৫ অক্টোবর) জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল ৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন পায়। যেখানে সাল্লু ও রফিক গ্রুপের লোকজনই বেশি আর মাহবুবুর রহমানের লোক স্বল্প। তা ছাড়া নিজেদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ হলে ও গত ২ বছরে অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বে একটি ও ইউনিট কমিটি গঠন করতে পারেনি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল।