ওসমান পরিবারের সহযোগীরা এখনো বহাল তবিয়তে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও নিহত ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেছেন, ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জে হত্যা, দখল, চাঁদাবাজি ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে দুর্বিসহ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। শামীম ওসমান ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। পট পরিবর্তনে তারা এখন পালিয়ে গেলেও তাদের সহযোগীরা এখনো বহাল তবিয়তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নতুন রূপে দুর্বৃত্তচক্রভাবে নারায়ণগঞ্জে গডফাদার হওয়ার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠেছে। গতকাল বুধবার (০৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে তিনি এ সব কথা বলেন। তিনি বলেন, “শেখ হাসিনা দেশে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া ও গডফাদারদের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তার নির্দেশে ত্বকী হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করলেও তাতে এখনও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।” আমাদের আকাঙ্খা ছিলো যে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই দিন ত্বকী হত্যার দ্রুত বিচার কার্য সম্পন্ন হবে। কিন্তু অন্তবর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছে ৫ মাস পূর্ণ হবে। তারা ক্ষমতা গ্রহণ করার পর বেশ তৎপর হয়ে উঠেছিলো। ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং একজনকে ১৪৪ ধারা জবানবন্দি নিয়েছে। আমরা মনে করেছিলাম যে, এই ত্বকী হত্যাকান্ডের সাথে যারা যারা জরিত এই শামীম ওসমান, তার ছেলে অয়ন ওসমান, আজমেরী ওসমান থেকে শুরু করে সকলকে বিচারের আওতায় এনে এই বিচারকে সংগঠন করবে। অভিযোগ পত্র দিয়ে কাজটি তারা শেষ করবে। কিন্তু তাদের কাজ শুরু করেও, আর কারো কোনো অগ্রগতি আমরা লক্ষ্য করি নাই।
তিনি আরো বলেন, গত ১৫ বছর এই যে শেখ হাসিনা সারা দেশে একটা মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলো এবং তার ফলশ্রুতিতে আমাদের নারায়ণগঞ্জে খুন, হত্যা, চাঁদাবাজি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে একটা অরাজকতার পরিস্থিতি ওসমান পরিবার এই নারায়ণগঞ্জে তৈরি করে রেখেছে। তাদের মুখের উপর যারা কথা বলতো, তাদের কথা অস্বীকার করতো তাদেরকে লাশ বানিয়ে তারা শীতলক্ষ্যায় ফেলতো। অসংখ্যা এমন উদাহরণ তারা তৈরি করেছে। আজকে তাদের এই নিপীড়ন-নির্যাতনের কারণে আজকে তারা দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনার সাথে পালিয়ে গেছে। কিন্তু তাদের এই যে নিপীড়ন বাহিনী যারা এই নারায়ণগঞ্জে শত শত হত্যা, চাঁদাবাজি, খুনের দ্বারা নারায়ণগঞ্জবাসিকে অতিষ্ট করে রেখেছিলো, তারা কেউই আইনের আওতায় বা বিচারের আওতায় আসেনি।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি যে ওসমান দোসরদের অনেকেই এখন এই বিএনপির সাথে মিশে আঁতাত করে এবং টাকা দিয়ে হেফাজতে থাকছেন। আমরা দেখলাম যে এই যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের একজন কাউন্সিলর ছিলো সে হত্যা মামলা বানিজ্য শুরু করেছে। বিএনপির অনেকেই করছে। যে কাউন্সিলর ওসমান পরিবারের সভায় উঠে জিন্দাবাদ দিয়েছে এই ১৫ বছর, সে এখন এই হত্যা মামলায় বাণিজ্য শুরু করেছে এবং তার টার্গেটই হচ্ছে ব্যবসায়ী হিন্দু সম্প্রদায়ে। বিএনপির যেমন বড় একটা অংশ মামলা বানিজ্য শুরু করেছে যার সাথে পুলিশরাও জড়িত রয়েছে। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনে তারা শুরু করেছে নিয়োগ বানিজ্য। টোপ দিয়ে তাদের কাছ থেকে ২ লাখ থেকে ৫/৭ লাখ টাকা করে তারা সেখানে নিচ্ছে। প্রশাসকের পিএস হিসেবে যে দায়িত্ব পালন করছে তার সম্পর্কে এই অভিযোগ ও সিও সম্পর্কেও এই অভিযোগ রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শেখ হাসিনা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা কি এমনিই আরেকটা লুটেরা দেশ আমরা দেখতে চেয়েছিলাম? যে এই মাফিয়া গডফাদার ওসমান পরিবার পতনের পর আরেকটা গডফাদার এখানে তৈরি হবে। আমরা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিকে আহ্বান করছি আপনারা এখানে চাঁদাবাজদের, মামলাবাজদের বিরত রাখার উদ্দ্যোগ নেন। নতুবা, নারায়ণগঞ্জে কি হয় আপনারা জানেন। সারাদেশে যা হয়েছে, নারায়ণগঞ্জ কিন্তু তার থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম। নারায়ণগঞ্জে লাশের পর লাশ ফেলেছে ওসমান পরিবার। তারপরেও নারায়ণগঞ্জের মানুষকে তারা ভাগিয়ে নিতে পারে নাই। সুতরাং এখানে ওসমান পরিবার যা-ই করে সৈন্য সম্রাজ্য দখল করে নিয়ে নিবেন, এটি মনে করার আর কোনো কারন নাই। নতুন গডফাদার যদি কেউ তৈরি হতে চায়, গডফাদার হিসেবে আবির্ভূত হতে চায়, নারায়ণগঞ্জে মানুষ তা মেনে নিবে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বিচার ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করেছে। এটাকে কোনো বিচার ব্যবস্থা বলে না। সে শুধু ত্বকী হত্যার না, বিভিন্ন হত্যাকান্ডের বিচার বন্ধ করে রেখেছিলো। আমরা এই বিচার ব্যবস্থাটার পরিবর্তন চাই। বিচার ব্যবস্থা পরিক্ষিত হোক, আমরা এটাই চাই। কিন্তু লক্ষ্যনীয় তেমন কোনো পরিবর্তন আমরা দেখছি না। আমরা বলতে চাই যে আমরা এই দীর্ঘ এক যুগ ধরে এই ত্বকী হত্যার আন্দোলন, এটা শুধু ত্বকী হত্যার বিচার নয়। আমরা ত্বকী হত্যা, সাগর, রনি, তনু হত্যাসহ নারায়ণগঞ্জে সংগঠিত সকল হত্যাকান্ডের বিচার আমরা দাবি করেছি। আমাদের এই বিচার সম্পন্ন হোক এবং নারায়ণগঞ্জে শান্তি ফিরে আসুক এটাই আমরা আশা করি।
তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্য বলেন, চাষাড়া থেকে ডিআইটি যেতে এক ঘন্টা সময় লাগে। কার দায়িত্ব এটা? কে দায়িত্ব নিবে? মূল দায়িত্ব এটা সিটি কর্পোরেশনের। তাকে সহযোগিতা করবে পুলিশ এবং প্রশাসনের বিভিন্ন বাহিনী। এই যানজট নিরসন হবে না ব্যাপারটাতো তা নয়। আমরা দেখেছি প্রশাসন উদ্দ্যোগ গ্রহণ করলে এই যানজট নিরসন করা সম্ভব। তাহলে আপনারা কেনো করছেন না। এই যে ফুটপাত দখল করে রাস্তার মাঝখানে চলে আসছে, এদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। তাদের চাঁদা কাঁটছে কারা, কারা বিদ্যুতের লাইন দিয়ে প্রতিদিন টাকা নিচ্ছে, আপনার পুলিশ কি তা জানে না? আপনার পুলিশও তো এর সাথে জড়িত। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ওসমানদের যে সম্রাজ্য ছিলো এখানে তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। এভাবে আঁতাত করে আপনারা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এখন যারা এসেছে তাদের সাথেও যদি আঁতাত করে একই কাজ করেন, মানুষ তাহলে কোথায় যাবে? প্রশাসনের কাজ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শুধুমাত্র সরকারকে পাহারা দিয়ে রাখা নয়। সরকারকে এই ১৫/১৬ বছর পাহারা দিয়ে রাখার পরিণতি আপনারা দেখেছেন যে কি হয়েছে। সুতরাং আমরা আশা করি জনমাধ্যম প্রশাসন হবে। যে প্রশাসনের টাকা, রিজিক, ভরণ-পোষণ মানুষের টাকায় হয়, জনগনের টাকায় হয়, সেই প্রশাসন জনবান্ধব হবে। শুধুমাত্র সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, গডফাদারদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য এগুলো তো করলেন, বহু বছর করলেন। এখন এগুলো বন্ধ করেন। আমরা আজকে এখানে দাড়িয়ে প্রশাসনকে আমাদের এই কষ্টের কথা, এই আকাঙ্খার কথা বলছি এবং বলছি নারায়ণগঞ্জবাসীর বাসে উপযোগী করার জন্য আপনাদের যা যা করার কথা তা আপনারা দায়িত্ব নিয়ে করেন। অনেক তো হলো এই চুরি- চামারি, হাবি-জাবি করে মানুষকে কই নিয়ে আনলেন। আমরা কিছুদিন দেখবো। মাত্র পাঁচ মাস হচ্ছে। মুখ বুঝে সব সহ্য করে নিবো এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমরা এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের মানুষকে নিয়ে যদি প্রশাসনকে মোকাবেলা করতে হয়, তা-ও করবো।
এ সময় নারায়ণগঞ্জের সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব হালিম আজাদ, সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা কমিটির সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, বাসদ সদস্য সচিব আবু নাঈম খান বিপ্লব, এড.আওলাদ হোসেনসহ প্রমুখ।