Logo
Logo
×

রাজনীতি

আবারো ধরাশায়ী তৈমূর

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

আবারো ধরাশায়ী তৈমূর

তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার ও বিএনপি নেতা জাকির খান

Swapno

# যে রায় হলো তাতে আর কেউ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাবে না : তৈমূর
 

তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে একটি বহুল আলোচিত নাম। আইনজীবী হিসেবেও তার খ্যাতি আছে বেশ। তবে ১৯৯৬ সালে তৈমুর আলম খন্দকার বিএনপিতে যোগদান করার পরই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হন। এর পর শহর বিএনপির দায়িত্ব গ্রহণ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিআরটিসি’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হওয়া এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দায়িত্ব পালনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তৈমূর। এর মধ্যে দুইবার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়রের প্রার্থী হন তিনি।



তবে সর্বশেষ তিনি বিএনপি থেকে বহিস্কৃত হওয়াসহ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সাবেক সরকারের পাতানো ফাঁদে পড়ে তৃণমূল বিএনপি নামক নতুন দলের মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করার বিষয়টি নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে ছিল বিশেষ আলোচনার খোরাক। যা এই ঝানু রাজনীতিকের অদূরদর্শিতার পরিচয় বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক মহল। আর সেই ধারাবাহিকতায়ই তার সর্বশেষ পরাজয় তার সহোদর নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকারের হত্যার রায়। হত্যার দীর্ঘ ২২ বছর পর গতকাল মঙ্গলবার মামলার সকল আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।



২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তৈমূর আলম খন্দকারের ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হলে তৈমূর আলম খন্দকার বাদী হয়ে ১৭ জনকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মতে নতুন দল গঠনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারকে সমর্থন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কারণে তৈমূর এখন ব্যাকফুটে চলে গেছেন।



 
গতকাল মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. মোমিনুল ইসলামের আদালতে সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার সকল আসামিকে বেকসুর খালাস দিলে ক্ষোভ ঝাড়েন তৈমূর। এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের স্বার্থ নিয়ে লড়তে গিয়েই জীবন দিয়েছেন সাব্বির আলম। অথচ এখন সেই বিকেএমইএ’র শীর্ষ নেতারাই সেসব সন্ত্রাসীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঝুটের ব্যবসা করছেন। দেশের সুপ্রিম কোর্টও এখন রাজনৈতিক বিবেচনায় চলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বর্তমান বিচার বিভাগ সবারই জানা। এখন আমরা ক্ষমতায় নাই, তাই এ নিয়ে চিন্তা করার কী আছে। তবে আমি দেখছি এটা নিয়ে আর কী করা যায়। আমি এর আগে একাধিকবার বলেছিলাম, সাব্বির হত্যার বিচার না হলে বাংলাদেশের আর কেউ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলবে না। যে রায় দেওয়া হলো আগামীতে মানুষ আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাবে না।
 



এর আগে ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় দেশের গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) প্রতিষ্ঠাকালীন পরিচালক ও সাবেক সহসভাপতি সাব্বির আলম খন্দকার। এর পর অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বাদী হয়ে ১৭ জনকে আসামি করে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটির দায়িত্বভার সিআইডি গ্রহণ করার পর প্রায় ৩৪ মাসের তদন্ত শেষে ২০০৬ সালে বেশ কিছু নাম কর্তন করে ৮ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন।
 



সূত্রমতে এক সময়ে আওয়ামী লীগ নেতা আলী আহাম্মদ চুনকার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ১৯৯৬ সালে শামীম ওসমানের বিরোধিতার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হতে না পারায় আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর আওয়ামী সরকারের সময় চাষাঢ়ায় অবস্থিত শহীদ জিয়া হলের নাম পরিবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করে প্রথমে আলোচনায় আসেন তৈমূর। এর ফলস্বরূপ নারাযণগঞ্জ শহর বিএনপির সভাপতি পদের দায়িত্ব পান তিনি।
 



১৯৯৭ সালে একটি রাজনৈতিক মামলায় হাইকোর্ট থেকে গ্রেপ্তার হয়ে পাকাপোক্তভাবে রাজনীতিতে আলোচনায় উঠে আসেন তৈমূর। যার ফলে ২০০১ এর ১৬ জুন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা হামলার ঘটনায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তারপর বিআরটিসির চেয়ারম্যান হন। এরপর ২০০৩ সালে তৈমূর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর ২০০৯ সালের জুন মাসে তৈমূর প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং ২৫ নভেম্বর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে সময় তাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জেলার ১৮ দলীয় ঐক্যজোটের আহ্বায়ক করা হয়। ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে মেয়র পদের প্রার্থী হয়েছিলেন তৈমুর। তবে ভোটের মাত্র ৭ ঘণ্টা আগে দলীয় চেয়ারপারসনের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে আসেন দাঁড়াতে বাধ্য হন তিনি।
 



তবে তার কপাল পুড়ে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদের প্রার্থী হওয়ায়। এরফলে ১৮ জানুয়ারি তৈমূর আলম খন্দকার এবং তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও মহানগর বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ২০২৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করা তৃণমূল বিএনপি নামের একটি নতুন রাজনৈতিক দলের মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করেন এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। আর তখনকার আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী সরকার শেখ হাসিনার সাথে আঁতাত করে তৈমূর আলম তার রাজনৈতিক উত্থানে ভূমিকা রাখা বিএনপিকে ধ্বংস করতে তৃণমূল বিএনপি নামক এই রাজনৈতিক দল গঠনই তৈমূরের রাজনৈতিক পেশায় পতন শুরু হয়েছে বলে মনে করেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। আর এই জাদরেল আইনজীবীর সর্বশেষ পরিণতি তার দায়ের করা তার ভাইয়ের হত্যা মামলার দীর্ঘ ২২ বছর পর বেকসুর খালাস হয়ে যাওয়া।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন