একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড প্রকাশ পাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানের। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে দখল-লুটপাট-চাঁদাবাজি-দখলের বিস্তর অভিযোগ মান্নান ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। বিএনপির প্রাথমিক তালিকায় মনোনয়নে নাম আসার পরে থেকে মান্নান নিজেই বিএনপিকে নিয়ে কটূক্তি এবং তার সমর্থকরা একের এক অপকর্ম করে গণমাধ্যম মিডিয়াতে ভাইরাল হচ্ছেন।

এবার মান্নানের দীর্ঘদিনের ক্রাইম পার্টনার রফিকুল ইসলাম বিডিআর যাকে মান্নান সোনারগাঁ উপজেলা জাতীয়পার্টির সহ-সভাপতি থেকে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি করেন। সম্প্রতি সেই বিডিআর পুত্র শাহাদাৎ মান্নানের আশকারায় চট্রগ্রাম থেকে ভাড়ার নামে প্রতারণা করে ডাম্ব বার্জ (ডিবি) নামে একটি জাহাজ পিতা-পুত্রে মিলে তাদের শিপইয়ার্ডে জাহাজটি কেটে ফেলেন। মূলত, আজহারুল ইসলাম মান্নানের মনোনীত প্রাপ্তির পর থেকেই পিরোজপুর ইউপি জুড়ে মান্নানের শেল্টারে বেপরোয়া হয়ে উঠেন বিডিআর রফিক এবং পুত্র শাহাদাত। যার ফলশ্রুতিতে একজন ব্যক্তির জাহাজ ভাড়া কথা বলে এসে কেটে ফেলেও তাদের কোন দ্বিধাবোধ হচ্ছে না।

সূত্র বলছে, গত ১নভেম্বর চট্টগ্রামের বাসিন্দা রাকেশ সর্মার ডাম্ব বার্জ (ডিবি) নামে জাহাজটি ৭ লাখ ২০ হাজার টাকায় এক মাসের চুক্তিতে  নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা জাফরের মাধ্যমে যিনি চট্টগ্রাম থেকে দেশব্যাপী জাহাজ ভাড়ার কাজ করেন। যার মাধ্যমেই শাহাদাত জাহাজটি ভাড়া করে নিয়ে এসে তার নেতৃত্বে মো. জাফর, ইকবাল হোসেন, নজরুল ইসলাম, এমদাদুল হক, জাফর মিয়া, হোসেনসহ ১০-১৫ জনের একটি সিন্ডিকেট পিরোজপুর ইউনিয়নের কাদিরগঞ্জ এলাকায় মেঘনা নদীর তীরে এইচবি হারুন অ্যান্ড ব্রাদার্স মেঘনা শিপইয়ার্ডে জাহাজটি কেটে বিক্রি করতে থাকেন।

গত ২৩নভেম্বর রবিবার রাকেশ সর্মা নিশ্চিত হোনে তার জাহাজটি দীর্ঘ ১৫দিন ধরে কেটে বিক্রি করছেন নিশ্চিত হন। পরবর্তীতে ঘটনস্থালে এসেও সত্যতা পান তবে এই বিষয়টি পরবর্তীতে শাহাদাতের বাবা বিডিআর রফিক ক্ষতিপূরণ দিবে বলে তালবাহানা করলে মামলা দায়ের করেন রাকেশ শর্মা। গত ২৫নভেম্বর রাতে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেন রাকেশ শর্মা। মামলায় উল্লেখ করেন রাকেশ সর্মা ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মামলার পরবর্তীতে ২৬নভেম্বর নজরুল ইসলাম নামে এক বিএনপি কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিকেলে তাঁকে নারায়ণগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারকৃত নজরুল ইসলাম নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরবগুলা গ্রামের ইমানুল হকের ছেলে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এই শাহাদাত এবং তার পিতা রফিকুল বিডিআর সোনারগাঁয়ের সাবেক জাতীয় পার্টির সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকার আস্থাভাজন এবং পিরোজপুর ইউপির নিয়ন্ত্রকও ছিলেন তৎকালীন সময়ে এছাড়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সহ-সভাপতি পদে ছিলেন বিডিআর রফিক পুত্র শাহাদাত নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি পদে থেকেও বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকেন।

হঠাৎ বিএনপির সুবাতাস দেখা দিলে আজহারুল ইসলাম মান্নান উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে তার ক্রাইম পার্টনার হিসেবে বিডিআর রফিককে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি পদায়ন করেন এবং পুত্র শাহাদাতকে মান্নান পুত্র সজীব যুবদলের রাজনীতিতে লিড দেন এবং তার বিভিন্ন অপকর্মে শেল্টার দেন। তবে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচির মশিউর রহমান রনির সাথেও সখ্যতা ছিল শাহাদাতের। এছাড়া ৫ আগস্টের পর মান্নানের প্রভাবে হোলসিম সিমেন্টের নিয়ন্ত্রকসহ বিভিন্ন শিপইয়ার্ডেও নিয়ন্ত্রণ নিতে যান পিতার রফিক বিডিআর পুত্র শাহাদাত।

এছাড়া ৫ই আগস্টের পর বহু অপকর্মের সাথে পিতা পুত্র সম্পৃক্ত থাকলেও মান্নানের মনোনয়ন লাভের পর বেপরোয়া হয়ে প্রতারাণার উৎস হিসেবে ভাড়ায় আনা জাহাজ কেটে বিক্রি করে ফেললে পিতা-পুত্রের অপকর্মের লীলাভূমি বের হয়ে আসে। তবে জাহাজ কাটার বিষয়ে সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রাশেদুল হাসান খান বলেন, মালবাহী জাহাজ কেটে বিক্রির ঘটনায় মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে নারায়ণগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শাহাদাতের বাবা বিডিআর রফিক ও শিপইয়ার্ডের মালিক জানান, বিষয়টি জানতে পেরে জাহাজ কাটা বন্ধ রাখা হয়েছে। মালিকপক্ষের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চলছে।