Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

আ.লীগ সময়ের রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম

আ.লীগ সময়ের রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী  মোশাকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ

আ.লীগ সময়ের রূপগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশাকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ

Swapno



# আত্মগোপনে থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা
# গত ১ বছর আওয়ামীলীগের ঝটিকা মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিলো
# নির্বাচন উপলক্ষে ভাড়াটে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে
#অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা চালাতো নির্বিঘ্নে



নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মোশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ  তাকে গ্রেপ্তার করে। শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজিসহ অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে।পুলিশ জানিয়েছে  মোশাকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।  এদিকে মোশার গ্রেপ্তারের খবরে রূপগঞ্জের ছড়িয়ে পড়ায় মোশা বাহিনীর অত্যাচারের শিকার সাধারণ মানুষের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। আওয়ামীলীগের সময়ে তার বাহিনীর নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছে মোশার।


পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে আওয়ামীলীগের শাষনামলে রুপগঞ্জের নাওড়া পাড়া এলাকা থেকে মোশার সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু হয়। ধীরে ধীরে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন থেকে শুরু করে গোটা রূপগঞ্জের আতঙ্কের নাম ছিলো মোশা বাহিনী। আওয়ামীলীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতার সেল্টারে থেকে রূপগঞ্জের অস্ত্র,মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন মোশা।  রূপগঞ্জ এলাকার সাধারণ মানুষের জমি ও বাড়িঘর দখল, চাদাবাজি, চাাঁদার দাবিতে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হামলা, মানুষের বাড়িঘরে হামলা এমনকি নিরিহ মানুষকে তুলে এনে মোশার টর্চার সেলে নির্যাতন ছিলো নিয়মিত ঘটনা।


চাঁদা না পেলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও উপরও হামলা চালাতো। বিশেষ করে আওয়ামীলীগের একাধিক নেতার ছত্রছায়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের জমি দখল, তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতো মোশা  ও তার বাহিনী। ওই সময়  একাধিক বার র‌্যাব ও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলেও যেতে হয়েছিলো মোশাকে তবে প্রভাবশালীতের তৎবিরে জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠে।  


পুলিশের গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে,  বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারীদের দমনে মোশা বাহিনীর সদস্যরা আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করেছে। নিজে নেতৃত্ব দিয়ে রুপগঞ্জ  থেকে শুরু করে নারায়গঞ্জ  এমনটি রাজধানীর ভাটারা ও বাড্ডা এলাকায় আন্দোলনকারীদের উপর একাধিক হামলা ও গুলি চালিয়েছে।  ৫ আগষ্টের পর আওয়ামীলীগ সরকার পতন হলে পুরোপুরি আত্মগোপনে চলে যায় মোশা ও তার বাহিনী।


তবে থেমে থাকেনি তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম। এলাকায় অস্ত্র  ও মাদকের ব্যবসা ও চাঁদাবাজি নির্বিঘ্নে চালিয়ে গেছে । ভোল পাল্টে বিএনপির শেল্টার নেওয়ার চেষ্টা করেছিলো গত ১ বছর।  তবে  সে চেষ্টা সফল না হওয়ায় আত্মগোপনে থেকেই আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলার জন্য সক্রিয় ছিলো তার কর্মকান্ড।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলের জন্য  নিয়মিত মোটা অঙ্কের টাকা দিতো মোশা। বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে ভারাটে সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন এলকায় ঝটিকা মিছিলের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো মোশা বাহিনী। আগামী নির্বাচনকে বানচাল করতে এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে রূপগঞ্জসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা এমনকি রাজধানীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বড় ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা করেছিলো মোশা। তার সঙ্গে পলাতক আওয়ামীলীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতার যোগাযোগ ছিলো গত ১৫ মাস ধরে।


প্রসঙ্গত গত বছর ১৫ মার্চ রুপগঞ্জ এলাকায় নিরীহ গ্রামবাসির উপর অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় মোশা  ও তার বাহিনী। ওই হামলায় মোশা বাহিনীর গুলিতে  নাওড়া পাড়া এলাকায় ১০ জন গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ অর্ধ শতাধিক মানুষকে আহত করে।  এর আগের বছর সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে তাকে গেপ্তারে অভিযান চালাায় র‌্যাব। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময়ে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেলেও আড়াই মাসের মধ্যে জামিন পেয়ে যায়।


অথচ ২০২৪ সালের ২৫ মার্চ মোশার নেতৃত্বে তার সশস্ত্র ক্যাডার নিরব, স্বাধীন, সাখাওয়াত উল্লাহ, আব্বাস, নাজমুল, রুবেল, আনোয়ার, জয়নাল, তাজেল, রিফাত, রায়হান, আলহাদি, জাগু, ভুট্টু, চোরা দুলাল, আব্দুল, আরমানসহ ৪০ থেকে ৫০ জন সদস্য পিস্তল, টেঁটা, বল্লম, রামদা, চাপাতি, চাইনিজ কুড়াল, সামুরাইসহ নানা ধরনের দেশি-বিদেশি অস্ত্র নিয়ে নাওড়ায় নিরীহ মানুষের ওপর হামলা করে।

রূপগঞ্জের একাধিক  বাসিন্দা জানায়, আওয়ামীলীগের সময়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশা মাদক, হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, অবৈধ দখল বাণিজ্যসহ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে কিছু দিন পরপরই স্থানীয়দের ওপর হামলা করতো ।


পরপর কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দ্ ুএকবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়েই ফের অবৈধ দখল, চাঁদাবাজি, মাদক কারবারসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো । ওই সময় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তার উপর চালাতো নির্যাতন। তুলে নিয়ে মোশার টর্চার সেলে নির্যাতন করতো।  


কে এই মোশা


রূপগঞ্জের আতঙ্ক তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ওরফে মোশা। হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ধর্ষণ, পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র মামলা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ৫০ টির বেশি মামলা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত বছরের ১ জুন ভারতে পালানোর সময় কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। মাত্র আড়াই মাসের মাথায় গত বছরের ২১ আগস্ট জামিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পায় মোশা। কিছু দিন ‘আত্মগোপনে’ থেকে মাফিয়া গডফাদারের ছত্রছায়ায় আবারও সে দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে আসে।


সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে এলাকায় এলাকায় শুরু করে মহড়া। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে বিশাল গাড়িবহর ও অবৈধ অস্ত্রধারী বডিগার্ড নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় পুরো রূপগঞ্জ। এর বাইরেও মোশার রয়েছে বিশাল টেঁটা বাহিনী ও হাতুড়ি বাহিনী। কেউ তার কথার বাইরে গেলেই তাকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।


মোশার বডিগার্ডের সংখ্যা কত, তার হিসাব নেই। রূপগঞ্জ থানার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপপরিদর্শক জানান, মোশার সঙ্গে সব সময় অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা কথিত বডিগার্ড হিসেবে ঘুরে বেড়ায়। প্রভাবশালী একাধিক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।


সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সন্ত্রাসী মোশার দলের সদস্যসংখ্যা ৭০ থেকে ৮০। এই সন্ত্রাসীরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, ছিনতাই, মাদক কারবারসহ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তারা ভয়ভীতি দেখায়। এলাকার মানুষ মোশা বাহিনীর ভয়ে তটস্থ থাকে।


আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা মোশা রূপগঞ্জের নাওড়া গ্রামের মোতালেব ভূঁইয়ার ছেলে। আপন বড় ভাইকে খুনের মধ্য দিয়ে অন্ধকার জগতে পা রাখা সে। এরপর সে হয়ে উঠে ভাড়াটে সন্ত্রাসী। বিভিন্ন সময়ে  বিভিন্ন আওয়ামীলীগের নেতাদের পক্ষ হয়ে এলাকায় জমি দখল, মানুষের উপর হামলা বিশেষ করে বিএনপিসহ আওয়ামীলীগ বিরোধী বিভিন্ন রাজণৈতিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হতো মোশা বাহিনীর।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন