উপজেলা বিএনপি সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফর
গিয়াসউদ্দিনকে সোনারগাঁয়ের মানুষও লুফে নিয়েছে
পরিচয় প্রকাশ গুপ্ত
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:০০ এএম
গিয়াসউদ্দিনকে সোনারগাঁয়ের মানুষও লুফে নিয়েছে
আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিক, সুধী সমাজ, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও রাজনীতি সচেতন মানুষের দৃষ্টি এখন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের দিকে। আগের সোনারগাঁয়ের সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জের একাংশকে একীভূত করে নব বিন্যাসের ফলে দু’দিক থেকেই একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর এখানে আনাগোনা শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এখানে এখন দেয়ালের গায়ে বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোষ্টার শোভা পাচ্ছে। জনমত পক্ষে টানতে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের নিয়মিত আনাগোনাও শুরু হয়ে গেছে। একমাত্র বিএনপি থেকেই এখানে চার চারজন প্রার্থীর দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এদের দুজন সোনারগাঁয়ের ও দুজন সিদ্ধিরগঞ্জের। সোনারগাঁয়ের দুজন হলেন বিএনপি থেকে চার বারের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম ও বর্তমান সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান। ওদিকে, সিদ্ধিরগঞ্জের দুজন হলেন নারায়ণগঞ্জের ক্যারিশ্মাটিক রাজনীতিবিদ এবং সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপি সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন এবং বর্তমান জেলা বিএনপি আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ। এরা প্রত্যেকেই জনমত পক্ষে আনতে সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন গ্রাম ও হাট-বাজারে নিয়মিত উঠোন বৈঠক ও সমাবেশ করছেন। জনমত গঠনে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে তার দুই সুযোগ্য ছেলে জিএম সাদরিল ও কায়সার রিফাতও মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
নির্বাচন নিয়ে সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক দাপুটে সভাপতি খন্দকার আবু জাফর বলেন, ‘অবসাদজনিত কারণে বর্তমানে সোনারগাঁ ও রাজনীতি থেকে সাময়িক দূরে সরে আছি। তবে একেবারে রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়িনি। ঢাকার বনশ্রীতে বসবাসের কারণে মাঝেমধ্যে কেন্দ্রীয় অফিসে যাই। সপ্তাহে-দুসপ্তাহে সামাজিক, পারিবারিক ও বৈষয়িক কারণে পৈত্রিক নিবাস সোনারগাঁও যেতে হয়।’
সোনারগাঁয়ের দু’প্রার্থী রেজাউল করিম ও মান্নানের মধ্যে কার অবস্থা কেমন? এ প্রশ্নের জবাবে আবু জাফর বলেন, রেজাউল করিমের সমর্থকদের মধ্যে রয়েছে বিএনপির পুরনো কর্মী ও প্রবীণ অধিবাসীরা। পক্ষান্তরে মান্নানের সঙ্গে রয়েছে তরুণ কর্মীরা। ৫ আগষ্ট গণ বিপ্লবের পর মান্নানের কর্মীরা দলের অনেক বদনাম করেছে। তাদের বিরুদ্ধে হামলা,ভাঙ্গচুর,দখল ও চাঁদাবাজির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। মান্নানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ, কর্মীদের খাই মেটাতে সে ৪০টি শিল্পকারখানা দখল করেছে। ৫ আগষ্টের পর স্বৈরাচারের দোসর আওয়ামী লীগ ইউপি চেয়ারম্যানরা পালিয়ে যাওয়ার পর চেয়ারম্যানের শূণ্য পদে ৩০-৪০ লাখ করে টাকা নিয়ে মেম্বারদের বসানো হয়েছে। এছাড়া সকুল-কলেজ কমিটিতেও নতুন যাদের অধিষ্ঠিত করা হয়েছে তাদের থেকেও মোটা অঙ্কের ঠাকা নেয়া হয়েছে।
সোনারগাঁ গেলে আপনি কার পক্ষে কথা বলেন? এ প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আবু জ্ফার বলেন, আমার কোন রাখঢাক নেই। সোনারগাঁয়ে আমি সরাসরি প্রফেসর রেজাউল করিম ও মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের পক্ষে কাজ করি। এরা দু’জনই বিএনপির পরীক্ষিত নেতা। রেজাউল করিম সোনারগাঁয়ে ধানের শীষ মার্কায় ৪ বার এমপি হয়েছেন। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জেলার ৫টি আসনের ৫টিতেই বিএনপি জয়ী হয়েছে। কিন্তু এ দুই নির্বচনের মধ্যবর্তী ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জেলার ৪টি আসনেই ধানের শীষের ভরাডুবি হয়েছে। তখন একমাত্র সোনারগাঁ আসনে অধ্যাপক রেজাউল করিম জয়ী হয়েছিলেন। সেই থেকে সোনারগাঁ এ জেলায় বিএনপির প্রধান ভোট ব্যাঙ্কের পরিচিতি লাভ করে। এদিকে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন হচ্ছেন এ জেলার চৌকষতম রাজনীতিবিদ। শিক্ষিত, মার্জিত, প্রজ্ঞাবান, সাহসী ও দূরদর্শী গিয়াসউদ্দিন একজন “টোটাল পলিটিশিয়ান”। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে সন্ত্রাসের গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান যখন তার প্রতিপত্ত্বির মধ্য গগনে তখন তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কবতে বিএনপিতে কোন প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই দুঃসময়ে গিয়াসউদ্দিন কেন্দ্রিয় কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ছেড়ে বিএনপিতে যোগদান করেন এবং শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন। তারপরের ঘটনা আলেকজেন্ডারের প্যারিস জয়ের “সেই ভিডি ভিনি ভিসি”। তিনি আসলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। সে নির্বাচনে প্রায় লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে শামীম ওসমান গিয়াসউদ্দিনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। শামীম ওসমানের পরাজয়ের সেই শুরু। এহেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে সোনারগাঁয়ের মানুষও লুফে নিয়েছে।


