বন্দরের খালগুলো অবৈধ দখলে অস্তিত্ব বিলীনের শঙ্কায়

লতিফ রানা
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

বন্দরের খালগুলো অবৈধ দখলে অস্তিত্ব বিলীনের শঙ্কায়
# প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভূমিদস্যুরা খাল গিলে খাচ্ছে বলে অভিযোগ
# মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়কের অংশে ৬টি খালের উপর ব্রিজ বর্তমান
# এখন বিভিন্ন জায়গায় খালের উপর নির্মাণ হচ্ছে বহুতল ভবন
# কাগজপত্রে খালের অস্তিত্ব নেই বলে ভূমিদস্যুদের দাবি
নদীমাতৃক বাংলাদেশে খনন করা খালগুলো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যা চাষাবাদসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজকরণ এবং বর্ষার সময় নদীর বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া অতিরিক্ত পানি সহজে নিষ্কাশনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। যা বন্যার হাত থেকেও রক্ষা করে বলে পরিবেশবাদীদের দাবি। অথচ নদী পথের প্রাণ হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা বন্দরের সেই খালগুলো আজ বেদখল হয়ে ভূমিদস্যুদের রাহুগ্রাসের শিকার হচ্ছে।
এক এক করে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সেসব খাল। প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বিভিন্ন সময় এসব খালের বিভিন্ন অংশে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাসহ স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব খাল একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে বলে তাদের দাবি।
বিভিন্নভাবে প্রতিবাদসহ এসব বেদখলের সংবাদ বিভিন্ন মিডিয়ায় উঠে আসলেও এমনকি স্থানীয় প্রশাসনকে অবগতি করলেও কোন এক অজানা কারণে তার কোন সুরাহা হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। বিভিন্ন অপকৌশলের মাধ্যমে এসব খাল জোর করে দখল করে নিচ্ছে স্থানীয় ভূমিদস্যুরা। গতকাল শনিবার বিকেলেও খালের অবৈধ দখলের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বন্দরের চৌধুরীবাড়ি এলাকার জনগণ। এর আগে বন্দরের এই খালটির বিভিন্ন অংশ বেদখল হওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়।
বন্দরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোট্ট এই বন্দর উপজেলার মধ্য দিয়ে ছোট-বড় কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি খাল রয়েছে। এরমধ্যে ৬ থেকে ৭টি খাল খুবই গরুত্বপূর্ণ এবং বৃটিশ শাসনাামল থেকেই এসব খাল আছে। বৃটিশ শাসনামলে তৈরি হওয়া মদনগঞ্জ থেকে ভৈরব (পরে তা কমিয়ে নরসিংদী পর্যন্ত করা হয়) রেল সড়কটির মদনপুর থেকে মদনগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত এসব এই খালগুলোকে সচল রাখার জন্য এসব খালের উপর দিয়ে রেল চলাচলের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়।
এর পর রেল সড়ক বিলুপ্ত হওয়ার পর ১৯৯১-৯৬ সালের বিএনপির শাসনামলে এই অংশের অর্থাৎ মদনপুর-মদনগঞ্জ বাস সড়ক নির্মাণের সময়ও সেসব ব্রিজের জায়গাগুলোতে যানবাহন চলাচলের জন্য পাকা ব্রিজ তৈরি করা হয়। অর্থাৎ প্রশাসন খালগুলোর অস্তিত্ব রক্ষায় ব্রিজের জায়গাগুলো সরাসরি ভরাট না করে সেসব জায়গায় ব্রিজ নির্মাণ করে খালগুলো সচল রাখার সুযোগ করে দেয়।
বর্তমানে বিভিন্্ন সময় কোটি কোটি টাকা খরচ করে সেসব ব্রিজগুলো সংস্কারের মাধ্যমে আরও প্রশস্ত কাজ এখনও অব্যাহত আছে। কিন্তু যে খালগুলোর অস্তিত্ব সচল রাখার জন্য এতো আয়োজন করা হয় সেসব খালগুলোই স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে বেদখল হয়ে গেলেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা স্থানীয় প্রশাসন তা রক্ষায় কোন ভূমিকা রাখছে না।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বন্দরের ধামগড়, লক্ষণখোলা, নবীগঞ্জ, বাগবাড়ি, কল্যানদী ও হাজীপুর এলাকা দিয়ে প্রবাহিত খালগুলোর উপর দিয়ে এখনও কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ হচ্ছে ব্রিজ। কিন্তু সেসব ব্রিজের নীদ দিয়ে প্রবাহিত খালগুলো আজ অস্তিত্ব সংকটে।
এমনকি কাগজপত্রে এসব এলাকায় কোন খালের অস্তিত্ব নেই বলেও স্থানীয় ভূমিদস্যুর অনেকে দাবি করছেন। যা স্থানীয় প্রশাসনও মেনে নিচ্ছে বলে এলাকাবাসির দাবি। এরই মধ্যে বেশিরভাগ খালের উপর মাটি ভরাট করে এখন বহুতল ভবন নির্মাণ হচ্ছে বলেও জানান তারা।