যুবলীগের ক্যাডারকে নিয়ে সমালোচনায় রাসেল মাহমুদ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

যুবলীগের ক্যাডারকে নিয়ে সমালোচনায় রাসেল মাহমুদ
বিএনপির রাজনৈতিক আদর্শ ও সংগ্রামী ভাবমূর্তির সঙ্গে বেমানান চরিত্রদের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সারাদেশ জুড়েই প্রশ্ন উঠছে। বিশেষত, দলবদল করা কুখ্যাত আওয়ামী যুবলীগ নেতাদের বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ছায়ায় দেখতে পাওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে। এমনই এক চাঞ্চল্যকর ও বিতর্কিত নাম জুম্মান মোল্লা।
ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল আলীর সহযোগী জুম্মান মোল্লা এক সময় এলাকায় ছিল ভয় আর আতঙ্কের প্রতীক। মীর সোহেলের ছায়ায় থেকে সে চালিয়েছে দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও মারামারির রাজত্ব। স্থানীয়দের অভিযোগ, কোনো সাধারণ মানুষ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারতো না, কারণ প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ছায়ায় সে ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। ‘যুবলীগের সন্ত্রাসী এখন বিএনপির ভরসা’ তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রশ্ন।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, এই জুম্মান মোল্লা এখন নিয়মিত ঘোরাফেরা করছেন বিএনপির অঙ্গসংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দল ফতুল্লা থানার সদস্য সচিব রাসেল মাহমুদের আশপাশে। বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা, গণসংযোগ, মিছিল-মিটিংয়ে দেখা যাচ্ছে তাকে। কেউ কেউ সরাসরি অভিযোগ করছেন—“জুম্মান এখন রাসেলের ‘বডিগার্ড’ সেজে ঘুরছে।”
শুধু তাই নয় এই জুম্মান মোল্লা ঘনিষ্ঠ জুয়েল নামের এক যুবলীগ নেতার সাথে, যিনি কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপি ও নেতাদের উদ্দেশে অশালীন ভাষায় গালাগাল করে ভাইরাল হয়েছিলেন। বিস্ময়করভাবে, সেই জুয়েল ও জুম্মান এক সময়ের বন্ধু। এবং এখন সেই জুম্মানকে ঘিরে ঘুরছেন রাসেল মাহমুদ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন একটি চক্রের উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে—জুয়েল-জুম্মান-কিলার সোহেল। এই তিনজনের মধ্যে নানা সময়ে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান, পরে আবার কাছাকাছি চলে আসা, শেষ পর্যন্ত জুম্মান মোল্লার ছবিসহ উপস্থিতি এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতিকে ঘিরে জোরালো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বিএনপির অনেকেই মনে করছেন, দল এখন এমন এক দিকের দিকে যাচ্ছে যেখানে সংগ্রামী ত্যাগী নেতাদের না দেখে জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে অপরাধী ও সুবিধাবাদীদের।
ফতুল্লা বিএনপির এক প্রবীণ নেতা বলেন, “আমরা যারা গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছি, গুম-খুনের ভয়ে পলাতক থেকেছি আজ তারা রাস্তার পাশে, আর জুম্মান-মোল্লার মতো ভয়ংকর লোকেরা আজ দলের নেতাদের সঙ্গে!”
তিনি আরও বলেন, “আমরা দলে এসেছি শহীদ জিয়ার আদর্শে, কিন্তু আজ দেখি আমাদের রাজনীতি হয়ে উঠছে পলাতক যুবলীগ নেতাদের লুকিয়ে রাখার ছদ্মআশ্রয়!”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি যদি তার কাঠামোর ভেতরে এমন অনুপ্রবেশকারীদের দমন করতে না পারে, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা বিনষ্ট হবে। যুবসমাজ, ছাত্রসমাজ এমনই কিছু উদাহরণ দেখে দলকে আর আদর্শভিত্তিক মনে করবে না। তারা প্রশ্ন রাখেন “যে ব্যক্তি আগে আওয়ামী লীগের নেতার লাঠিয়াল ছিল, চাঁদাবাজ ছিল, এখন সে যদি বিএনপির সঙ্গী হয়, তাহলে আদর্শ কোথায়?” তৃণমূলের আহ্বান দ্রুত সাংগঠনিক তদন্তের দাবি।
ফতুল্লা ও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট থেকে ইতোমধ্যেই আওয়াজ উঠছে জুম্মান মোল্লা ও তার ঘনিষ্ঠ মহলের রাজনৈতিক পরিচয়, অতীত এবং বর্তমান সম্পর্ক খতিয়ে দেখতে হবে। দলীয় ফোরামে তাদের বিচরণ নিয়ে কঠোর সাংগঠনিক তদন্ত না হলে দলের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ তৈরি হতে পারে।
যখন একদিকে বিএনপি সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন দলের অভ্যন্তরে এমন বিভ্রান্তিকর সম্পর্ক ও মুখোশধারীদের নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই থাকবে। আদর্শ, ত্যাগ আর সাহসিকতার দল হিসেবে পরিচিত বিএনপিকে এসব বহিরাগত ও বেনামিদের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।