
জলাবদ্ধতায় আবারো নাকাল ফতুল্লাবাসী
ফতুল্লায় আবারও ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় জনজীবন চরম বিপর্যয়ের মুখে। লালপুর, ইসদাইর বটতলা, পাকিস্তান খাদ, তাগারপাড়, পুলিশলাইন, পঞ্চবটীসহ আশেপাশের এলাকাজুড়ে পানিতে তলিয়ে গেছে অলিগলি। সড়কে যানচলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে, রিকশা থেকে শুরু করে প্রাইভেটকার পর্যন্ত পানির উচ্চতায় অচল হয়ে আছে।
মানুষ বাধ্য হয়ে ময়লা ও বিষাক্ত পানির মধ্যে দিয়ে হেঁটে গন্তব্যে যাচ্ছেন। কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ভ্যান কিংবা নৌকা করে চলাচল করছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষায়, "প্রতিবারই একটু বৃষ্টি হলেই এই অবস্থা হয়। কিন্তু এবার তো পরিস্থিতি একেবারে সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। স্কুল-কলেজ, অফিস—সব জায়গায় যেতে আমাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে।"
জলাবদ্ধতা নিরসনে কী করা হচ্ছে জানতে চাইলে ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার মাইনুদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে আমরা পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছি। নিয়মিত পানি নিষ্কাশনের পাম্প চলছে। একটি পাম্পে সমস্যা দেখা দেওয়ায় ডিসি মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত সমাধান হবে। জলাবদ্ধতা নিরশনে আমাদের ইউএনও মহোদয় ভীষণ আন্তরিক। আগের তুলনায় এবার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করছি যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।"
অন্যদিকে ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল আউয়াল জানান, "আমরা নিয়মিত খাল পরিষ্কার করি। কিন্তু একমাস না যেতেই আবার ময়লায় ভরে যায়। মানুষ সচেতন না হলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব না। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা কাজ করছি।"আমাদের পরিশ্রমের পাশাপাশি এলাকাবাসীর ও সচেতন হতে হবে।
কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবারই একই আশ্বাস, একই প্রতিশ্রুতি। অথচ সমাধান নেই। খাল পরিষ্কারের দায়িত্ব শুধু প্রশাসনের নয়, জনগণেরও সচেতনতা দরকার—এ সত্য মেনে নিয়েও তারা বলছেন, "যেখানে পাম্পই সঠিকভাবে চলে না, খালের মুখে যদি ময়লা আটকে থাকে, তাহলে সচেতনতা দিয়ে তো পানি নামবে না।"
বছরের পর বছর ধরে এই এলাকা জলাবদ্ধতায় ভুগছে। অথচ এখন পর্যন্ত নেই কোনো স্থায়ী সমাধান। পানিনিষ্কাশনের উপযুক্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, খাল পুনঃখনন ও ময়লা ফেলার ব্যাপারে কঠোর নজরদারি না থাকলে ফতুল্লা থেকে জলাবদ্ধতা দূর হবে—এমন প্রত্যাশা করাটাও এখন এক ধরনের বিলাসিতা।
এই চরম দুর্ভোগে জনজীবন যখন হাঁসফাঁস করছে, তখন প্রয়োজন শুধু কথা নয়, বাস্তবসম্মত ও দ্রুত পদক্ষেপ। নয়তো ফতুল্লা আরও একবার "নদীর দেশ" বাংলাদেশের এক জলাবদ্ধ ভাসমান শহরের প্রতীক হয়ে উঠবে। ফতুল্লার মানুষ জলের মধ্যে ডুবে থাকবে, আর প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসবে।