Logo
Logo
×

স্বাস্থ্য

দায়িত্ব ও অবহেলার শিকার বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

দায়িত্ব ও অবহেলার শিকার  বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স

দায়িত্ব ও অবহেলার শিকার বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স

Swapno

# এই ময়লা ডাম্পিংয়ে সরিয়ে নেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই : হাসপাতাল প্রধান

# নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বরত জেলা সিভিল সার্জন সক্রিয় নন : তরিকুল সুজন

 

বন্দর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ রোগীদের নিয়ে দুর্ভোগের বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়তই আলোচনা ও সমালোচনা হয়। কিন্তু তাতেও কমছে না এখানকার রোগীদের দুর্ভোগ। চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব, ঔষধের অভাব, মেশিনের অপারেটরের অভাব, নিরাপত্তার অভাব, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব, এমনকি অভাব আছে পানীয় জলের। এই সব অভাবের মধ্য দিয়েই যেন ধুকে ধুকে চলছে এখানকার নামমাত্র চিকিৎসা সেবা। এই চিকিৎসা কেন্দ্র নিয়ে জেলা সিভিল সার্জনেরও নেই কোন মাথা ব্যথা। অথচ শহরের সাথে উন্নত ও দ্রুত যোগাযোগের অভাবে এই হাসপাতালটি বন্দরের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ লোকের ভরসাকেন্দ্র হওয়ার কথা। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কম খরচে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা গ্রহণের লক্ষ্যে এখানে আসেন শত শত রোগী। হাসপাতাল সূত্রে এখানে দৈনিক প্রায় ছয়শত থেকে সাতশত লোক চিকিৎসা নিতে আসে বলে জানা যায়। তবে রোগীরা এখানে চিকিৎসা নিতে এসে যে ধরণের সেবা প্রত্যাশা করেন তার সিকি ভাগও পান না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেকেই বিভিন্ন ধরণের ভোগান্তির শিকার হয়ে এখান থেকে ফিরে যান বলে জানা যায়। ছোট-খাটো চিকিৎসার জন্যও শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে দৌরাচ্ছেন বলে রোগীদের অভিযোগ।

 

সারা দেশে ডেঙ্গু প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চলছে পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ডেঙ্গু ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। অথচ এমন সব রোগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে অভিযোগ করছেন বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা। সরেজমিনে গিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখা যায় একটি করুন চিত্র। হাসপাতালের উত্তর পাশে  আছে একটি বিশাল ময়লার স্তুপ। যেখানে সাধারণ বর্জ্যসহ মেডিক্যাল বর্জ্য একসাথে পড়ে আছে। এসব ময়লা এখানে বছরের পর বছর পড়ে থাকলে সেগুলো সরিয়ে নেওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্তুপ অনেক বেড়ে গেলে অনেকটা বাধ্য হয়েই আগুনে পুড়িয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি করতে হয় বলেও জানান তারা। এরই কাছাকাছি একটি খোলা ড্রেনের মধ্যে জমে আছে ময়লা পানি যেখানে লার্ভা তৈরি হওয়ার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরে ফ্লোরসহ সেখানকার ওয়াশ রুমগুলোর বেশিরভাগই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। ভবনের জানালার পাশে প্রচুর ময়লা ও নোংরা হয়ে রোগজীবাণুর আশ্রয়কেন্দ্র হয়ে আছে। সবচেয়ে বড় আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো হাসপাতালে থাকা রোগীদের জন্য নেই কোন পানযোগ্য পানির ব্যবস্থা। বেশিরভাগ রোগীর পরিবারই বোতল দিয়ে মসজিদের ওজুখানা থেকে পানি নিয়ে আসে আর যারা একটু স্বচ্ছল তার পানির বোতল কিনে আনে বাইরে থেকে।

 

বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবেলায় জেলার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোর বর্তমান অবস্থান যাচাইয়ের লক্ষ্যে গতকাল বুধবার বন্দর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা পরিদর্শন করে নারায়ণগঞ্জ গণসংহতি আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ হাসপাতালের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ও দায়িত্বহীনতার চিত্র দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

 

জেলা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, আমরা হাসপাতালে প্রবেশের সময় একটি উন্মুক্ত ড্রেনে দেখতে পেলাম প্রচুর পরিমান জমাটবদ্ধ পানি, যেটা মশার প্রজনন ক্ষেত্র এবং লার্ভা তৈরি কারখানা। তারপাশেই দেখতে পেলাম একটি বিশাল ময়লার স্তুপ, যেখানে মেডিক্যাল বর্জ্য এবং সাধারণ বর্জ্য একসাথে রাখা হচ্ছে। যা খুবই শঙ্কার বিষয়। আমরা ঘুরে দেখেছি এখানকার পরিত্যাক্ত আবাসিক ভবনগুলো এখন মাদক সেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সেখানে মাদক গ্রহণের বিভিন্ন উপাদানও পেয়েছি। এখানকার ওয়াশরুমগুলো অপরিচ্ছন্ন, বেশ কিছু পানির কল থাকলেও সেখানে নেই পানির কোন সরবরাহ। এখানকার আবাসিক রোগীরা অভিযোগ করেছেন তাদের কোন পান করার জন্য কোন পানির ব্যবস্থা এখানে নেই। এখানকার সবাইকেই বাহির থেকে পানি কিনে এনে খেতে হয়। আমরা এখানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। আমরা তাকে জানিয়েছি যে, আমরা জানি হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয়েই তাদের সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমরা তাদের আন্তরিকতা এবং উদাসীনতা নিয়ে বেশ শঙ্কা প্রকাশ করছি। আমরা এখানে যেটুকু দেখতে পেয়েছি তাতে দায়িত্বরতদের নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা নিয়ে অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা আছে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আগামী একসপ্তাহের মধ্যে এখানকার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়গুলো যেগুলো দেখা সম্ভব তা তিনি করবেন। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নারায়ণগঞ্জ এর দায়িত্বরত জেলা সিভিল সার্জন সক্রিয় নন। তিনি সক্রিয় হলে শুধু বন্দর নয়, সমগ্র নারায়ণগঞ্জে সকল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই সাধারণ জনগণ সঠিক চিকিৎসা সেবা পেতো। আসলে তিনি যতটুকু বলেন ততটুকু (দায়িত্ব পালন) করেন না। জনগণকে জিম্মি করে প্রাইভেট ব্যবসাগুলোকে কিংবা প্রাইভেট হাসপাতালগুলোকে লাভজনক করা যদি তাদের উদ্দেশ্য হয় তাহলে সেটাতে জনগণ প্রতিবাদ জানায়। এ ধরণের অব্যবস্থাপনা আমরা মেনে নিতে পারি না।

 

এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ রাজিউর রহমান জানান, আমাদের এখানে প্রয়োজনের তুলনায় লোকবলের খুবই অভাব। ৩১ শয্যার সেটআপ দিয়ে ৫০ শয্যা হাসপাতাল চালানো হলেও সেই সেটআপের জনবলও আমাদের নেই। এখানকার পচ্ছিন্ন কর্মী ৫ জন থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র তিনজন। এই তিনজন দিয়ে একটি পাবলিক প্লেসের ফ্লোর, ওয়াশরুম এবং বাইরের আঙ্গিনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও আমরা এগুলো দ্রুত পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে বাইরে থাকা আবর্জনা বা বর্জ্যরে স্তুপের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের এখান থেকে ময়লা বা বর্জ্য বাহিরের কোন ডাম্পিংয়ে রাখার জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা নেই।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন