Logo
Logo
×

নগর জুড়ে

সম্মিলিত উদ্যেগে নির্বিঘ্নে দুর্গোৎসব সম্পন্ন

Icon

যৃুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০০ এএম

সম্মিলিত উদ্যেগে নির্বিঘ্নে  দুর্গোৎসব সম্পন্ন

সম্মিলিত উদ্যেগে নির্বিঘ্নে দুর্গোৎসব সম্পন্ন

Swapno

প্রতি বছর শরতের সময় বাংলাদেশসহ ভারত ও নেপালের কোটি কোটি সনাতন ধর্মাবলম্বী তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উদযাপন করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন অনুষ্ঠিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরেও। কোন পুজায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই। গত রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর  মহাষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এবারের দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে। যা ২ অক্টেবার নারায়ণগঞ্জ ৫ নং ঘাট দিয়ে বিসর্জনের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলাহীন শান্তিপুর্ণ ভাবে দুর্গাপূজা উদযাপন হয়েছে। প্রতিবছর শরতের সময় এই পূজার আয়োজন করা হলেও তারিখে পার্থক্য দেখা যায়। হাজার বছর ধরেই এই রীতি চলে আসছে। সনাতন ধর্মের শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রতি বছর শরৎকালে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়। এই কারণে একে শারদীয় দুর্গোৎসবও বলা হয়ে থাকে।

এদিকে তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জে এবার মোট ২২৪টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭৯টি, বন্দরে ২৯টি, সোনারগাঁয়ে ৩৫টি, আড়াইহাজারে ৩৭টি এবং রূপগঞ্জে ৪৪টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। প্রতিটি পুজায় নিরাপত্তায় প্রশাসনের সকল বিভাগের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টিম নিয়োজিত থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পুজামণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। তাছাড়া বিএনপির সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা প্রতিদিন বিভিন্ন পুজায় গিয়ে হিন্দু ধর্মালম্বের ব্যক্তিদের সাথে দেখা করে খোজঁ খবর নিয়েছেন। কোন পুজা মন্ডবে অসুবিধা আছে কি না তার সকল খবরাখবর রেখেছে।

বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান নিজে প্রতিদিন সদর বন্দরের বিভিন্ন পুজায় গিয়ে খোঁজ রেখেছেন। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ই্উসুফ টিপু কোন অংশে পিছিয়ে নেই। সেই সাথে সাবেক এমপি আবুল কালাম মাঠে নেমে পুজামন্ডব ঘুরে খোঁজ খবর নিয়েছেন।

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার নগরীর বিভিন্ন পুজামন্ডবে গিয়ে হিন্দু ধর্মের এই বড় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজার খোঁজ নিয়েছেন। সেই সাথে পুজামণ্ডপগুলোতে সহযোগিতা করে তাদের পাশে থেকেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরো জেলার পূজামণ্ডপগুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপন হওয়ার জন্য সকল ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি এবং সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় মণ্ডপগুলো আনা। প্রশাসন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পূজা আয়োজনে পুলিশ, র‌্যাব এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ের উপর জোর দিয়েছে। যাতে করে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে। ইতোমধ্যে সকলের প্রচেষ্টায় নারায়ণগঞ্জের কোন পূজামণ্ডপে কিংবা মন্দিরে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে নাই।

শান্তিপূর্ণভাবে পূজা উদযাপনের জন্য প্রশাসন আইন-শৃঙ্খলা জোরদার : পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

সিসিটিভি নজরদারি : পূজার সব মণ্ডপ সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। যাতে করে কেউ যদি কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটালেও তা থেকে পার পেতে ন্ া পারে। সিসিটিভি ক্যামরা বসাতে  ষরযন্ত্রকারীরাও তেমন কোন বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারে নাই। শান্তিপূর্ণ ভাবে স্থানীয় প্রশাসন পূজার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে আগে থেকে সভা করছে এবং প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। প্রতিটি পূজা মণ্ডপে সরকারিভাবে নাসিক ও জেলা প্রশাসক থেকে আর্থিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সমন্বয় : উৎসবের আনন্দ ও আধ্যাত্মিকতা বজায় রাখতে আরতি, অঞ্জলি, মন্ত্র জপ এবং ধূপ-প্রদীপ জ্বালানোর মতো প্রথাগুলো অনুসরণ করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা :পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পূজামণ্ডপগুলোতে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৎপর থেকে দায়িত্ব পালন করেছে। পূজা উদ্যাপনকারীরাও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করছেন এবং উৎসবটি আনন্দ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করছেন।

ঐতিহ্য : শারদীয় দুর্গোৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা সাধারণত আশ্বিন মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসব সাধারণত পাঁচ দিন ধরে চলে, যার মধ্যে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও বিজয়া দশমী বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিজয়া দশমীতে বিসর্জনের মাধ্যমে তা শান্তিপূর্ন ভাবে শেষ হয়। এই উৎসবের মাধ্যমে দেবী দুর্গার আগমন ও গমনকে কেন্দ্র করে আগামী বছরটি কেমন হবে, তার পূর্বাভাস দেওয়া হয় বলে জানান হিন্দু ধর্মালম্বির ব্যক্তিরা। প্রতিমা বিসর্জন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ২ অক্টোবর রাত ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন পূজামন্ডবের দেবী শীতলক্ষ্যা নদীতে বিসজর্নের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) তারেক আল মেহেদী বলেন, দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর নজরদারি ছিল পুরো জেলাজুড়ে। প্রায় সাড়ে ৮০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হয়েছে পূজার নিরাপত্তায়। চার স্তরের নিরাপত্তার পাশাপাশি তিনটি ভাগে ভাগ করে মণ্ডপগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে করেছে পুলিশ। কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা ছিলনা, থাকলেও পুলিশ প্রশাসন প্রস্তুত ছিল।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাস করি। এখানে কারও সঙ্গে কোনো দূরত্ব নেই। এই জেলাতে ২২৪টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। তার মধ্যে বেশ কিছু পূজামণ্ডপকে আমরা কিছুটা নজরদারিতে রেখেছি। যাতে কোনো অসাধু ব্যক্তির কোনো অসাধু উদ্দেশ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে কোনোভাবেই নষ্ট করতে না পারে। তারই ধারাবাহিকতায় পারে নাই। কেননা নারায়ণগঞ্জে খুবই শান্তিপূর্ণ ভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শান্তি বজায় রাখার জন্য পূজামণ্ডপ তৈরি থেকে শুরু করে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই পুরো কার্যক্রমে গোয়েন্দা নজরদারি রাখা হয়েছে।

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, এই বছর সকলের প্রচেষ্টায় হিন্দু ধর্মালম্বির সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শান্তিপুর্ণভাবে বিসজর্নের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা প্রতিটি পূজামণ্ডপে গিয়ে সকলের খোঁজখবর নিয়েছি। কার  কোন অসুবিধা থাকলে তা সমাধান করেছি, সকলেই শান্তিুপূর্ণভাবে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালন করেছে।


Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন