Logo
Logo
×

নগর জুড়ে

অভিযানকে পাত্তা দিচ্ছে না চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট

Icon

লিমন দেওয়ান

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

অভিযানকে পাত্তা দিচ্ছে না  চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট

নারায়ণগঞ্জকে যানজট ও দখলমুক্ত রাখতে মীর জুমলা সড়ক দুইদিনের মধ্যে দখলমুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশনকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিঞা।

Swapno

নারায়ণগঞ্জের দিগু বাবুর বাজার সংলগ্ন মীর জুমলা সড়ক পুরোটা অস্থায়ী দখল করে শতাধিক দোকান বসিয়ে সাধারণ জনগণের চলাচলে ভোগান্তি দিচ্ছেন একদল চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। যারা ঐতিহ্যেবাহি সড়কটিকে দখল করে সকাল-বিকাল দুই বেলা চকি বসিয়ে দোকান ভাড়া দিচ্ছেন একটি সিন্ডিকেট। এই মীর জুমলা রোড দখল থাকায় নিয়মিত যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। এ ছাড়া ও মীর জুমলা রোডের এক সাইড মায়লার ভাগাড়ে পরিণত করেছে দোকানীরা। বর্তমানে শহরে ব্যাপক যানজট নিরসনে গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যানজট নিরসনের লক্ষে সামাজিক, রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায়। নারায়ণগঞ্জকে যানজট ও দখলমুক্ত রাখতে মীর জুমলা সড়ক দুইদিনের মধ্যে দখলমুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশনকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছিলেন ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিঞা। সেই আলোকে টানা দুইদিন নগরীর যানজট নিরসনে মীর জুমলা রোড উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেই মীর জুমলা রোড দখলকৃত এক চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট অভিযান পরিচালনার ১ ঘন্টা পরই আবার দোকানদারদের সেখানে দোকান বসাতে বাধ্য করেন।



এদিকে গত বোরবার (২ ফেব্রুয়ারি) সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মোনাববর হোসেনের নেতৃত্বে মীর জুমলা রোডে অভিযান পরিচালনা হয়। সে সময় তিনি সকল দোকানদারদের অবগত করেন ১ ঘন্টার মধ্যে দোকান সরিয়ে ফেলার জন্য সে সময় অনেকেই চালালে ও বিকালে আবারো সেই চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের নির্দেশে দোকান সাঁজিয়ে বসে পরেন। পরবর্তীতে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আক্তারের নেতৃত্বে ফের অভিযান হলে ও সন্ধ্যার পর থেকে আবারো রাস্তা দখল করে সেই জাঁকজমক বাজার। চাঁদাবাজদের লাগামছাড়া দৌরাত্মে কোন প্রকারের ইফেক্ট পড়ছে না জেলা প্রশাসকের উচ্ছেদ অভিযানের। এ ছাড়া গত দুইদিন মীর জুমলায় জেলা প্রশাসকের উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে কয়েকজন অস্থায়ী দোকানদার বলেন, আমরা এখানে টাকা দিয়ে বসি। নিয়মিত টাকা দিয়েই এখানে বসতে পেরেছি। তাহলে এখন সমস্যা কিসের। দুইদিন পরপরই অভিযান সে সময় সেই টাকা নেওয়া চাঁদাবাজরা উধাও। আবার তারা পরবর্তীতে জোরপূর্বকভাবে বসতে বাধ্য করে। ইজারাদারকৃত দোকানের যে ভাড়া আমরা সেই সমপরিমান ভাড়া দিয়েই এখানে বসতে হয়।



খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিগুবাবুর বাজারের ইজারাদার রুবেল হোসেন। যিনি বিগত দিনে দিগু বাজারের নামে ইজারা নিয়ে মীর জুমলা রোডে নিয়মিত দুই বেলা দোকান বসাতেন। এই দোকানগুলো রোড দখল করে বসিয়ে তারা প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করতেন। কিন্তু গত আগষ্টের পট পরির্বতনের পর এই বাজারে ইজাদার হিসেবে রুবেলের দায়িত্বে থাকলে ও বিএনপির দেওভোগের একটি গ্রুপ বিগত দিনে বসানো সেই দোকানগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মাসিক ভাড়া তোলা শুরু করেন। এদিকে সেখান থেকে ও সুবিধা হিসেবে একটি অংশ পান এই রুবেল হোসেন।  জানা গেছে, এই রোডে যে দোকানগুলো বসানো হয়। ওই দোকানের চৌকি প্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিতে হয়। যদি দোকান বড় হয় তাহলে সেখানে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা ও দেয়া লাগে নিয়মিত। এই রোডে বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে শুরু করে সিরাজদৌল্লা রোড পর্যন্ত রাস্তার উপরে ফলের দোকান ১২টা, শাক-সবজির দোকান ৩৪টা, মাছের দোকান ১৩টা, আলু,পিয়াজ,আদা, রসুনের দোকান ১৫টা, পানের দোকান ৭টা, মুরগী ও গরুর মাংসের দোকান ১৪টা। এই দোকানগুলো দিয়ে এই পুরো রোড দখল করে দুই বেলায় মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে রাজনৈতিক ব্যাক্তি অনেকেই। এই রোডটি অবৈধ দখলের কারণে সংকীর্ণ হয়ে রয়েছে। রাস্তাটি দিয়ে যানবাহন ও প্রবেশ করতে পারছে না। এই মীর জুমলার প্রধান মুখ যেটা বঙ্গবন্ধু সড়কের সাথে ওইটা বন্ধ করে রেখেছে অস্থায়ী ভ্যানগাড়ি দিয়ে দোকান বসিয়ে। আর সিরাজদৌল্লাহ রোডের সাথে প্রবেশ মুখ রয়েছে সেটা ও বন্ধ করে রাখা হয়েছে হকারদের বসিয়ে। এই রোডকে দখল করে তারা চাঁদাবাজি করতে করতে এই রোডকে মৃত বানিয়ে ফেলছে। সর্বশেষ মীর জুমলা সড়ক দখলমুক্ত হয়েছিল এসপি হারুন অর রশিদের সময়। যা প্রায় ১ মাস চলমান ছিলো।



পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের গোল টেবিল বৈঠকের মাধ্যমে ও সর্বশেষ ১৫ দিন এই মীর জুমলা সড়ক দখলমুক্ত থাকলে আবার বিগত দিনের একদল চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট আবারো ফাঁক ফোঁকরে বিভিন্নভাবে প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকদের ম্যানেজ করে আবারো দোকান বসায়। পরবর্তীতে গত ৫ আগষ্টের পাঁচ মাস পর নারায়ণগঞ্জে নতুন জেলা প্রশাসক আসলে তিনি বিভিন্নভাবে মীর জুমলা রোডকে যানজটের অন্যতম রেড জোন হিসেবে বিবেচনা করে দখলমুক্তের জন্য দুই দফায় অভিযান দিলে ও কোন প্রকারের লাভ হয়নি। তারা যাওয়ার ১ ঘন্টার মধ্যে আবারো দখল হয়ে যায় ঐতিহ্যেবাহি সড়কটি। গত রবিবার ও সোমবার জেলা প্রশাসকের অভিযান শেষে সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মোনাববর হোসেন ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আক্তার বলেন।



সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. মোনাববর হোসেন বলেন, যানজট নিরসনের জন্য আমাদের একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানে সুশীল সমাজের লোকজন ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ছিলেন। তাদের সকলের সিদ্ধান্তের পরিপেক্ষিতে আমাদের এই অভিযান পরিচালনা হয়েছে। যানজট নিরসনে আমাদের যতটুক ভূমিকা রাখা যায় আমরা রাখবো। রাস্তার উপর যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে, বিশেষ করে ভাসমান দোকান-পাট তা উচ্ছেদ করা ও মালামাল জব্দ করে সিটি করপোরেশনে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অবৈধ স্টান্ড থেকে তিনটি সিএনজিকে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে।



সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা ফুটপাত দখল ও অবৈধ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি এবং এটি চলমান থাকবে। শহরের যানজট কমাতে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অপরিহার্য। রাস্তার ওপর থাকা সব অবৈধ স্থাপনা সরানো হচ্ছে। জনগণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা হবে।’

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন