রাইফেল ক্লাবের অস্ত্র লুটের অর্ধবছর
লুটের ৮৩ অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার ২৫টি!

সাইমুন ইসলাম
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

রাইফেল ক্লাবের অস্ত্র লুটের অর্ধবছর, লুটের ৮৩ অস্ত্রের মধ্যে উদ্ধার ২৫টি!
৪ আগষ্ট ২০২৪, দিনটি ছিলো রবিবার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এদিন নারায়ণগঞ্জের চাষাড়স্থ রাইফেল ক্লাবে হামলা,ভাঙ্গচুর,অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়।এসময় ক্লাবের ভল্ট ভেঙ্গে এর ভেতর থাকা ৮৩ টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে দুর্বৃত্তরা।তবে ঘটনার ১ মাস ০৩ দিন পর অজ্ঞাতনাম দুই থেকে আড়াইহাজার আসামীর বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন ক্লাবটির শ্যুটিং সম্পাদক কাজী ইমরুল কায়েস।
সূত্র জানিয়েছে , হারানো আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর মধ্যো পয়েন্ট ১২ বোরের শর্টগান ছিলো ১ টি, পয়েন্ট ১৭৭ এয়ার রাইফেল ছিলো ২২ টি, পয়েন্ট ১৭৭ ম্যাচ এয়ার রাইফেল ছিলো ০৮ টি, পয়েন্ট ২২ বোর ফ্রি পিস্তল ছিলো ০১ টি, পয়েন্ট ২২ বোর স্পোর্টিং রাইফেল ছিলো ০২ টি, পয়েন্ট ২২ পিস্তল ছিলো ০২ টি, পয়েন্ট ২২ র্যাপিড ফায়ার পিস্তল ০৪ টি, পয়েন্ট ২২ স্টার্ন্ডাড রাইফেল ০৭ টি, পয়েন্ট ১৭৭ এয়ার পিস্তল-২২৫৭৬ ছিলো ০১ টি, পয়েন্ট ১৭৭ এয়ার রাইফেল(কম্প্রেসড)০২ টি, পয়েন্ট ১৭৭ ম্যাচ এয়ার পিস্তল ০৮ টি, ১৭৭ স্টেয়ার এয়ার পিস্তল ০৪ টি, পয়েন্ট ২২ বোর স্মল টার্গেট রাইফেল ০৬ টি, পয়েন্ট ২২ প্রি পিস্তল ওয়েলদার ০১ টি, পয়েন্ট ২২ রাইফেল ০১ টি, পয়েন্ট ২২ বোর রাইফেল ০৭ টি।
সর্বমোট আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা ৭৭টি। অন্যদিকে এই ক্লাবে নিরাপত্তা হেফাজতে রক্ষিত ক্লাবের কর্মকর্তা ও কোচের আগ্নেয়াস্ত্র ছিলো ০৬ টি।
এর মধ্যো খালেদ হায়দার খান কাজলের ছিলো ০১ টি একনালা বন্দুক, কাজী ইমরুল কায়েসের ছিলো পয়েন্ট ২২ বোর রাইফেল একটি, কাজী জহিরুল ইসলাম এর পয়েন্ট ১২ বোর বন্দুক একটি, মো.শফিকুজ্জামানের পয়েন্ট ২২ বোরের একটি রাইফেল একটি ও পয়েন্ট ৩২ পিস্তল একটি, ওয়াবদুর রহমান জাইদ এর পয়েন্ট ২৫ বোর পিস্তল একটি। অর্থাৎ তাদের মোট ০৬ টি অস্ত্র ছিলো। সুতরাং তথ্যমতে, রাইফেল ক্লাব থেকে সবমিলিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছে ৮৩ টি।
শুধু আগ্নেয়াস্ত্রই নয়। রাইফেল ক্লাব থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ/কার্তুজ/এয়ার পিলেটস লুটপাট করা হয়েছে।তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ক্লাবের শ্যুটিং এর জন্য ব্যবহৃত ৬ হাজার ৩৫৬ টি, বিক্রয়যোগ্য ৩ হাজার ৫১৫ টি, সদস্যদের ব্যাবহারের জন্য ৭২৩ টি সর্বমোট ১০ হাজার ৫৯৪ টি গোলাবারুদ/কার্তুজ/এয়ার পিলেটস লুটপাট করা হয়েছে।
শুধু তাই নয় এই ক্লাবে লুটের ঘটনায় ২৫ টি এসি, ০৬ টি ফ্রিজ, ১১ টি টেলিভিশন, ১০ টি স্টিলের আলমারি, ৬ টি পারটেক্সের আলমারি, ৭ টি ডাবল আইপিএস, ৩০ টি বৈদ্যুুতি পাখা, ০১ টি কম্পিউটার, ০১ টি স্ক্যানার, ০১ টি লেজার প্রিন্টার, ০১ টি কালার প্রিন্টার,০১ টি ফটোষ্ট্যাট মেশিন, ১৫৫ টি চেয়ার, ২৫ টি টেবিল, ০২ টি পোলবোর্ড, সোফাসেট ০৪ টি, পানির ট্যাংকি, দরজা , জানালা, ক্যাবলসহ প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে।
এতসংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র লুন্ঠিত হলেও উদ্ধার কতটি এমনটা জানতে চাইলে রাইফেল ক্লাবের শ্যুটিং সম্পাদক কাজী ইমরুল কায়েস জানান, প্রথমদিকে সকল বাহিনীর সহযোগীতায় ৯ টি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়নি কয়টি উদ্ধার হয়েছে। তিনি আরোও জানান, আমরা যে মামলা করেছি এর কোনো তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে আমি জানিনা।
অন্যদিকে এ বিষয়ে পুলিশ সুপার প্রত্যুশ কুমার কে ফোন করলে তিনি জানান, ‘এই মূহুর্তে বলতে পারছি না, ঠিক কতটি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।’
তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি)তাসনিম আক্তার জানান, ‘এ পর্যন্ত ২৫ টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এবং ৬৫৯ টি গুলি ও ৪ টি টিয়ার গ্যাস উদ্ধার করা হয়েছে।তিনি আরোও জানান,এ বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।আমাদের অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম জোরালোভাবে চলছে।’
এ মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি জানান, ‘মামলাটির তদন্ত চলছে। মামলাটি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।’
তবে নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট জনেরা মনে করে, নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থার ব্যাপক অবনতি হয়েছে। সন্ত্রাসী প্রকৃতির কিশোরগ্যাং সদস্যদের উৎপাতে সবাই অতিষ্ঠ। যদি লুট হওয়া অস্ত্রগুলোর উদ্ধারে জোরালো কার্যক্রম করা না যায় তবে এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।এবার দেখার বিষয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এ বিষয়ে কতটা তৎপরতা দেখায়।