Logo
Logo
×

নগর জুড়ে

সিলেকশন শেষ, ইলেকশনে নারায়ণগঞ্জ : এড.সাখাওয়াত

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

সিলেকশন শেষ, ইলেকশনে নারায়ণগঞ্জ : এড.সাখাওয়াত

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান

Swapno

মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে আমরা এমন অনেক দেখেছি। তখন যাদেরকে আমরা দেখেছি চুপ করে রয়েছেন তারা অনেকেই শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানকে বা সেই সময়ের অপকর্মকে তারা সেই সময় সমর্থন করেছেন বলতে চাই। আমাদের নারায়ণগঞ্জের মূল সমস্যাটা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে যেই প্রশাসনই আসে তা শক্তিশালী হয় না। এখানে যারা আসে, মধু খাওয়ার জন্যে আসে। মধু খাওয়া শেষ হলে চলে যায়। আমাদের নারায়ণগঞ্জকে ঠিক করতে হলে প্রথমেই আমরা যারা এখানে বসছি, আমাদের নারায়ণগঞ্জে যারা ভালো মানুষ আছে, যারা সন্ত্রাস ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে, তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। আর যারা দূরে আছে কিন্তু এসব গুনাবলি আছে, তাদের সংঘবদ্ধ করতে হবে। আমাদের এই বাংলাদেশে যেই পরিবর্তিত পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ কিন্তু ৫ই আগষ্টে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। নারায়ণগঞ্জে সরকারিভাবে ৩৫ জন নিহত হয়েছে। সেই নারায়ণগঞ্জ আপনারা দেখেছেন বৈষম্যের নারায়ণগঞ্জ। বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের অনেকটাই নারায়ণগঞ্জ থেকে যায়। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ শহরে ঘুরলে, বাংলাদেশের অন্যত্র ছোট জায়গার মধ্যে ঘুরলেও ভালো লাগে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে এই করুণ পরিস্থিতির জন্য আমরা মনে করি আমরাই দায়ী। গতকাল নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবনের ৭ম তলায় ‘ আমরা কেমন নারায়ণগঞ্জ চাই?’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ‘আমার নারায়ণগঞ্জ’ এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

তিনি বলেন, আমাদের এই অবস্থান থেকে আমাদের কথা বলা শুরু করতে হবে। আমরা বলতে চাই, ইতিপূর্বে যারা এই নারায়ণগঞ্জকে নেতৃত্ব দিয়েছে, এখানে বলেছে নারায়ণগঞ্জ একটি “বি” ক্যাটাগরির জেলা। আমি আইনজীবী সমিতির সভাপতি থাকাকালীন দেখেছি, নারায়ণগঞ্জের একটা বিল্ডিং আছে যেটাকে “বি” ক্যাটাগরি হিসেবে পাশ হয়েছিলো। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্বে অদক্ষতার কারণে সেই “বি” ক্যাটাগরিও হয়ে আসে নাই। নারায়ণগঞ্জে চেয়ে ছোট জেলায় ভবন তৈরি হয়েছে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জে “সি” ক্যাটাগরির বিল্ডিং হয়েছে এবং যেটা বিভাগীয় শহর সেখানে হয়েছে “এ” ক্যাটাগরির। এজন্য আমাদের প্রথমে আন্দোলন করতে হবে যে নারায়ণগঞ্জকে যেনো “এ” ক্যাটাগরিতে আনা হয়। এটা আমরা বলতে পারি এজন্য যে, বাংলাদেশে ১০টা সিটি কর্পোরেশন রয়েছে। সেই বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে শুধু নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর ছাড়া সব “এ” ক্যাটাগরির । এই নারায়ণগঞ্জকেও যেন “এ” ক্যাটাগরির মধ্যে আনা হয়, সেটার জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে। এমন আইন করতে হবে যাতে প্রশাসন দক্ষ হয় সেটার প্রতি।



তিনি আরো বলেন, আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে ইতিপূর্বে আমরা অনেক সময় দেখেছি ডান দিকের দল আর বাম দিকের দল। এটা যেন না হয়। এটা দিয়ে আমি বুঝলাম যে, যারা খারাপ প্রত্যেকই খারাপ। প্রত্যেক খারাপকে একভাবে ট্রিট করতে হবে। আমি আমার দলের পক্ষ থেকে একটা কথা বলতে চাই, আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আমাদেরকে বলেছে, নারায়ণগঞ্জে না শুধু, বাংলাদেশের সকল প্রান্তে এই মেসেজ পাঠানো হয়েছে। আমাদের জোর করে কেউ যেন সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলবাজদের সৃষ্টি না হয়। একটা কথা, এই যে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজের ফ্যানটা কিন্তু এখনো চলছে। কিন্তু ফ্যানের যখন সুইচ বন্ধ করে দেয়া হবে, ওইটাও কিন্তু কিছুক্ষণ চলে। তো এই অবস্থা নারায়ণগঞ্জে থাকবে না। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলবাজ কিন্তু নির্বিত্ত হবে। আমাদের স্বার্থেই নারায়ণগঞ্জকে পরিষ্কার করতে হবে। এটাই আমাদের অঙ্গিকার হউক এবং এই অঙ্গিকারই আমরা বাস্তবায়ন করবো ইনশাল্লাহ।



তিনি বলেন, আমাদের এই নারায়ণগঞ্জের অনেকগুলো সমস্যার কথা বলা হয়েছে। সেই সমস্যা সমাধান হবে ওই সময়, যদি এটাকে এই ক্যাটাগরিতে পরিনত করা যায়। আমাদের নারায়ণগঞ্জের যেই রেললাইন, সেই রেললাইনের আজ কি এক অবস্থা। আমরা শুনছি বাস মালিকরা, ওইটা যেন না হয় ওইটার জন্য করে যাতে রেললাইনে এটা না হয়। এই রেললাইনকে প্রথমে আমাদের একটা সুন্দর রেললাইন করতে হবে। আমাদের এই নারায়ণগঞ্জের অনেক শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, চাকরীজীবী পরিবার ঢাকাতে থাকে। কেনো থাকে? কারণ একটা দুইটা মানসম্পন্ন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জে নাই। যার জন্যে ঢাকাতে বসবাস করে শিক্ষার জন্য। নারায়ণগঞ্জে একটা রোগীকে ভালো কোনো চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা নাই। অথচ জাতীয় আয়ের একটা বিশেষ অংশ নারায়ণগঞ্জ থেকে যায়। সেখানে উন্নতমানের হসপিটাল হবে না কেন। তাহলে মানুষ আর ঢাকা যাবে না চিকিৎসা করতে বিদেশ যাবে না। প্রথমে আমাদের সেই ভালো চিকিৎসালয় দাবি করতে হবে, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাতে স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং নারায়ণগঞ্জের মানুষ যেনো সুশিক্ষা নিতে পারে। তাহলে কিন্তু এই নারায়ণগঞ্জকে ভালো করা সম্ভব।



তিনি বলেন, আজকে কিন্তু যে কথা বলা হয়েছে যে কিছু কিছু অস্থিরতা। আর এগুলো দূর করতে হলে, আমরা এখানে যারা আছি সবাইকে ঐক্যবদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আজকে এই ৫ ই আগস্টের পরে, আপনারা জানেন যেই প্রশাসন রয়েছে ১৬ বছর মনের মাধুরি দিয়ে শেখ হাসিনাসহ যারা এই প্রশাসন সাজিয়েছে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ দেখে দেখে প্রশাসনে বসিয়েছে, আজকে দেখেন প্রশাসন যেটা করার কথা, যানজট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি এগুলো দূর করার কথা। কিন্তু প্রশাসনের অনেক ক্ষেত্রে নিষ্কিয়তার কারনে কিন্তু আজকে সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এর জন্য আমাদের প্রথমে আমাদের নারায়ণগঞ্জের যেই প্রশাসন রয়েছে, সেই প্রশাসনকে সক্রিয় করতে হবে। প্রশাসন সক্রিয় না হলে আমাদের কোনো ভালো উদ্যোগও কাজে আসবে না।



তিনি আরো বলেন, আমাদের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে আপনাদের সকল ভালো কাজে এবং সন্ত্রাসী ও অন্যায় দমনের কাজে বিএনপি সবসময় আছে। আরেকটা কথা হলো, প্রত্যেকটা জায়গায় কিছু খারাপ লোক থাকে। এই খারাপকে আমাদের ঘৃণা করতে হবে। আমরা কেউ খারাপ কাজ করলে সেটার বিরুদ্ধে আপনাদের সকলকে দাঁড়াতে হবে। একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন যে, আমাদের দলে যদি কেউ খারাপ থাকে, আমরা তাকে পশ্রয় দেই কিনা। আমরা চাই সুসংগঠিত নারায়ণগঞ্জ, বসবাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের সাথে যাতে সুন্দর একটি নারায়ণগঞ্জ গড়ে ওঠে সেটিই আমাদের প্রত্যাশা।



তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে যে ৩৫টি হত্যা হয়েছে, সেই ৩৫টি হত্যার বিচার যাতে হয়। যারা হত্যা করেছে খুন করেছে, তাদের ফুটেজ যাদের কাছের আছে, তারা তা প্রশাসনকে দিবেন। তাদের বিচারে আপনারা অংশগ্রহণ করবেন। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে আজ যে ত্বকী হত্যা হয়েছে, সেই ত্বকী হত্যার বিচার নারায়ণগঞ্জে হবে ইনশাল্লাহ। আর ৭ খুনের যে রায় হয়েছে, তার বিচারও হবে ইনশাল্লাহ। আমাদের নারায়ণগঞ্জে যারা বিতর্কিত রয়েছেন, তাদের দিয়ে আগামীতে যে নির্বাচনগুলো হবে, সেই নির্বাচনগুলো আমরা প্রত্যাখান করবো। আমার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে অনুরোধ হলো, যাদের এই ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড রয়েছে, তাদেরকে মনোনয়ন দিবেন না। আর সর্বশেষ একটা কথা এখানে বলে যেতে চাই, গণতন্ত্র কিন্তু সমাজ থেকে নির্বাসিত। সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গণতন্ত্রের মাধ্যমে, নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। সেখানে কোনো সিলেকশন করে দেয়া হবে না। সবাই শপথ করেন যে, সিলেকশন শেষ, ইলেকশনে নারায়ণগঞ্জ। যাকে ব্যবসায়ীরা চায়, যাকে স্কুল-কলেজগুলোতে চায়, যাকে যেখানে চায় ছাত্র থেকে শুরু করে আইনজীবী সমিতির যেখানে যাকে চাইবে সেখানে তাই হবে।



গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জের নানাবিধ সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড.সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড.আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রাইম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবু জাফর আহমেদ বাবুল, বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি প্লামি ফ্যাশনস এর এমডি ফজলুল হক, জামায়াতে ইসলামী নারায়ণগঞ্জের আমীর মাওলানা আব্দুল জাব্বার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, মানবাধিকারকর্মী ও নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এড.মাহবুবুর রহমান মাসুম, নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিকী, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি হাজী নুরউদ্দিন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ন্যাপ নারায়ণগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক এড.আওলাদ হোসেন,   বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জীবন প্রমুখ। গোলটেবিল বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন